বর্তমান সমাজ মাধ্যম সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা (Beauty Standard) দিনদিন বদলে যাচ্ছে। ঠোঁটে ফিলার, মুখে কসমেটিক সার্জারি— এই শব্দগুলো আজ আর শুধুই বলিউডের (Bollywood) গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। টলিউডেও (Tollywood) চলছে রূপ পরিবর্তনের প্রবণতা। সম্প্রতি অভিনেত্রী তথা ইনফ্লুয়েন্সার ‘উরফি জাভেদ’ (Urfi Javed) -এর ঠোঁটের আকার দেখে বিস্মিত নেটিজেনরা। তাঁর নতুন চেহারার ছবি ভাইরাল হতেই প্রশ্ন উঠছে— নিজেকে অন্য রকম করে তোলার এই আগ্রহ কি আদৌ প্রয়োজন ছিল?
এই প্রসঙ্গে জনমানসে ছড়িয়ে পড়ছে দ্বিমত। দর্শকের একাংশের দাবি, আজকাল অনেক অভিনেত্রীই একই রকম দেখতে হয়ে গিয়েছেন— যেন মুখের ওপর এক ছাঁচ বসিয়ে তৈরি। শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ছবি ঘিরেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। তারকাদের ব্যক্তিগত চেহারায় হস্তক্ষেপ করা ঠিক না হলেও, দর্শকদের একাংশ মনে করছেন এই ‘নতুন চেহারা’র জন্য অভিনেত্রীরা নিজেদের স্বকীয়তা হারাচ্ছেন। এমন অবস্থায় অভিজ্ঞ অভিনেত্রীদের মতামত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, ভগবান যে রূপ দিয়েছেন, সেটিকে যত্নে রাখাই যথেষ্ট। কৃত্রিম উপায়ে নিজের মুখ পরিবর্তন করার মধ্যে তিনি কোনও প্রয়োজন দেখেন না। তাঁর মতে, পর্দার জগতে স্বাভাবিক সৌন্দর্যই সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই বিতর্কের মাঝেই আর এক প্রবীণ অভিনেত্রী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar) মুখ খুললেন অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং আত্মবিশ্বাসী সুরে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি কোনও দিন এসবের ধারেকাছেও যাইনি।” এমনকি সামান্য বিউটি পার্লারে যেতেও তাঁর অনীহা।
চলতি প্রজন্মের তারকারা নিজেদের রূপচর্চা ও শরীরবিন্যাস নিয়ে বেশি সচেতন, এই কথার বিরোধিতা করেন না মমতা শঙ্কর। তবে তাঁর বক্তব্য একেবারেই আলাদা। অভিনেত্রী সোজাসুজি জানালেন, তিনি স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও বয়সজনিত পরিবর্তনকে তিনি স্বাভাবিক বলেই মানেন। তাঁর মতে, বয়সের ছাপ মুখে পড়বেই, আর তা ধরে রাখতে গিয়ে কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা একপ্রকার নিজের সত্তাকেই অস্বীকার করা। মায়ের কাছ থেকেও তিনি কোনও দিন কৃত্রিম সৌন্দর্যচর্চার উদাহরণ দেখেননি বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘‘শুধু শরীর নয়, মগজও চায় খাবার!’’ “সন্তান কি পড়ছে, সেটা নয়, কী খাচ্ছে সেটাই বড় চিন্তা!” “শিশুদের একাকীত্ব তৈরি করছে অভিভাবকরাই!”— প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়া প্রজন্ম, বই পড়ার অনীহায় ক্ষুব্ধ চন্দন সেন! সমাজের বদল চেয়ে সোজাসাপটা বার্তা তাঁর!
যদিও বর্তমান প্রজন্ম কী করবে, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য রাখতে চান না তিনি। মমতা শঙ্কর বলেন, “পরিবর্তনের হাওয়ায় সবাই নিজের মতো করে চলতে চান।” কিন্তু যে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তা হল— এই কসমেটিক সংস্কৃতিই কি এক সময় অভিনেত্রীদের স্বতন্ত্র পরিচিতি মুছে দেবে? সবার মুখ যদি একই রকম দেখতে হয়ে যায়, তাহলে অভিনয়ে বৈচিত্র্য কোথায়? চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা বা আবেগ তখন কি আদৌ পৌঁছবে দর্শকের কাছে? এ প্রশ্নেই ঘুরপাক খাচ্ছে সমসাময়িক তারকা সংস্কৃতির সৌন্দর্যবোধ।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।