নতুন প্রজন্মের শাড়ি পরার ধরন নিয়ে কিছুদিন আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন প্রবীণ অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar)। একটি মন্তব্যে সদ্য পদ্মভূষণ প্রাপ্ত এই শিল্পী বলেন, শাড়ির আঁচল কাঁধ থেকে ফেলে দেওয়া বা নামিয়ে পড়ার ধরণ অনেকটাই ‘ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো মেয়ের’ মতো দেখায়। তাঁর এই কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা। শুধু সাধারণ মানুষই নন, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির তারকারাও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলেন। যদিও সেই বিতর্কের মাঝেই মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তিনি কাউকে ছোট করতে চাননি বা পোশাকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। তবে বিতর্কে জড়ালেও মমতা শঙ্কর নিজের বিশ্বাস থেকে সরেননি। তিনি মনে করেন, কোনও সংস্কার বা আচারকে শ্রদ্ধা করার অর্থ এই নয় যে, তাতে আধুনিকতা হারিয়ে যায়। হিন্দু ধর্মে শাঁখা, পলা আর সিঁদুরকে বিবাহিত নারীর পরিচয় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আর সেই বিশ্বাসকেই তিনি আপন করে নিয়েছেন বহু বছর ধরে। নিজের প্রতিদিনের সাজে শাঁখা-পলা পরা, সিঁথিতে সিঁদুর – এগুলো তাঁর কাছে শুধু গয়না নয়, বরং মানসিক শান্তির প্রতীক।
একটি সাক্ষাৎকারে মমতা জানান, বিদেশের নারীরা যদি বিয়ের পরে ওয়েডিং রিং পরে ঘুরতে পারেন, তবে এ দেশের নারীরা কেন শাঁখা-পলা পরতে লজ্জা পাবেন? তিনি বলেন, “আমি বিয়ের পর থেকেই শাঁখা-পলা পরে আসছি। এগুলো পরলে আমার ভেতরে একটা মানসিক স্থিরতা আসে। সিনেমার চরিত্রের প্রয়োজনে খুললেও, বাস্তব জীবনে এই প্রতীকগুলোর উপস্থিতি আমার বড় প্রিয়।” অভিনেত্রী স্পষ্ট জানান, এগুলো তিনি শখ করে পরেন না, বরং বিশ্বাস করে পরেন।
মমতা আরও জানান, তাঁর জীবনের এক প্রবীণ আত্মীয়ার সঙ্গে ঘটেছিল একটি ঘটনার কথা, যা আজও তাঁর মনে গেঁথে রয়েছে। ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যাওয়া সেই দিদিমা, মাত্র ১১ বছর বয়সে বিধবা হন। একবার মমতা তাঁর বাড়িতে শ্যুটিং সেরে দেখা করতে গেলে তিনি মমতার হাতে শাঁখা না দেখে বিস্মিত হন। সেই মুহূর্তে তিনি যা বলেছিলেন, তা মমতার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেছিলেন, “সোনা বা হীরের গয়না বড়লোকরা পরে, গরিবরা পরে কাঠ বা কাঁচের। কিন্তু এই শাঁখা-পলা ভাগ্যে না থাকলে কেউই পরতে পারে না।”
আরও পড়ুনঃ বিরাট খবর! সিরিয়াল সেটে প্রেম করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টেলি অভিনেতা! জানেন কী, কার সঙ্গে প্রেমে মজেছেন টেলি অভিনেতা শমীক চক্রবর্তী?
সেই কথাগুলো আজও মমতার হৃদয়ে দাগ কেটে রয়েছে। তিনি জানান, একবার টিভি অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ তুলতেই বহু মানুষ পরে তাঁর কাছে এসে জানিয়েছিলেন, ওই কথা তাঁদেরও নাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তার পর থেকে তাঁরা শাঁখা-পলা ছাড়া ভাবতেই পারেন না। আজ যখন বহু মানুষ ঐতিহ্যবাহী গয়না বা চিহ্ন থেকে সরে আসছেন, তখন মমতা শঙ্করের মতো একজন অভিনেত্রীর এই অকপট বিশ্বাস হয়তো কিছু মানুষকে তাঁদের শিকড়ের কথা নতুন করে ভাবতে শেখাবে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।