টলিউডে একসময় যার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, সেই স্যান্ডিই (Sandip Sandy Ghosal) আজ যেন সময়ের নিষ্ঠুর খেলায় কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন। বছর কয়েক আগেও বড় বড় তারকাদের সাজিয়ে তোলাই ছিল তাঁর দিনযাপনের অন্যতম অংশ। শুটিং ফ্লোর, বিদেশ সফর, লাইট-ক্যামেরার দুনিয়া, সবকিছুর সঙ্গে তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দ। কিন্তু শরীরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ব্রেন টিবির (Brain TB) ধকল তাঁকে পুরোপুরি বদলে দেয়। পুরনো স্মৃতি ঝাপসা হয়ে গেছে তাঁর! কখনও কান্না, কখনও অস্থিরতা, কখনও আকস্মিক আনন্দ মিলিয়ে এক অদ্ভুত মানসিক ভাঙনের মধ্যেই কাটছে তাঁর বর্তমান!
এই অবস্থায় স্যান্ডিকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। বিশেষ করে অভিযোগ উঠছে, যেসব অভিনেত্রীদের তিনি একসময় নিজের হাতে সাজিয়েছেন, তাঁদের নাকি এখন দেখা মেলে না। খোঁজ তো দূরের কথা, ফোন ধরেও নাকি কথা বলেন না কেউ। স্যান্ডির সব সময়ের সঙ্গী, বিয়াসের (Beas Roy) কিছু কথা এই অভিযোগকে আরও বড় করে তুলেছে। কিন্তু সমস্যাটা হল, সমাজ মাধ্যম যেমন দ্রুত সহানুভূতি তৈরি করে, তেমনই কখনও কখনও সত্যিটাকে আড়াল করেও রাখে। যে কোনও ঘটনার সবচেয়ে সহজ ব্যাখ্যাই সেখানে সবচেয়ে বেশি ‘বিক্রি’ হয়।
কিন্তু সব গল্প একরকম নয়। স্যান্ডির বিষয়ে যাঁরা সত্যিই তাঁর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের কাছে ছবিটা একেবারেই আলাদা। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) বহুদিন ধরেই চুপচাপ তাঁর পাশে থেকেছেন, আর এটা হয়তো বাইরের কেউ জানেই না। স্যান্ডির শরীর খারাপ হলে মিমি নিজে গিয়ে দেখতেন, কীভাবে সাহায্য করা যায় সেটা খুঁজে বের করতেন। কখনও নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে কিছুটা সময় ভালো কাটানোর চেষ্টা করতেন। এমনকি তাঁর বাড়ির কর্মী বুলটিও স্যান্ডিকে আগলে রেখেছেন।
বর্তমানে মিমির বাড়ির কিছু ভিডিয়ো বা ছবি বাইরে বেরিয়েছে, সেগুলোও বুলটির সদিচ্ছাতেই। মিমির কোনও প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়। অন্যদিকে, বিয়াস নিজের মতো করে স্যান্ডির পাশে দাঁড়িয়েছেন। দীর্ঘদিনের পরিচয়ের জায়গা থেকে তাঁর কষ্ট, অসহায়তা তুলে ধরেছেন, প্রয়োজনের সময় চিকিৎসা ও দেখাশোনার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর লেখায় হয়তো আবেগের তীব্রতা বেশি, কিন্তু উদ্দেশ্যটা নিঃসন্দেহে মানবিক। তবে তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, কেউই নাকি স্যান্ডির পাশে নেই, সেটা পুরো সত্য নয়!
আরও পড়ুনঃ ‘ময়দানে আমরা ভেজ-ননভেজ ভেবে প্যাটিস খাই না, বাঙালিরা মাংশাসী জাত!’ ‘ধর্মের নামে স্বৈরাচারিতা মানবিকতার পরিপন্থী!’ গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে দুই চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে হেন’স্থার ঘটনায় প্রতিবাদে সরব অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়!
কারণ কেউ কেউ নিঃশব্দে সাহায্য করে, প্রচার করে না। সবাই যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে প্রমাণ দেয়, এমন তো নয়! তবে, এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হয়তো এইটাই যে মানুষের পাশে থাকা মানে সবসময় সমাজ মাধ্যমে ছবি দেওয়া নয়, মাঝে মাঝে সেটা অনেক বেশি ব্যক্তিগত আর অনেক বেশি নীরব। স্যান্ডি যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের কেউ কেউ হয়তো সত্যিই দূরে সরে গেছেন, আবার কেউ কেউ আছেন যাঁরা কথা রাখেন, সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন এবং প্রচার নয়, দায়িত্ববোধ থেকেই পাশে দাঁড়ান।






