“ওই যে লম্বা দাড়ি ছিল যে ঠাকুরের, কবিতা লিখতেন…তাঁর থেকেই শিখেছি, কিভাবে প্রবীণদের সঙ্গে কম আর নবীনদের সঙ্গে বেশি মেশা যায়”, “ওদের কাছেই শেখার আছে অনেক কিছু”— তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অকপট পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়!

টলিউডের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ‘পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ (Paran Bandopadhyay) এমন এক অভিনেতা, যিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন— বয়স কখনও শিল্পের সীমা নির্ধারণ করতে পারে না। দীর্ঘ অভিনয়জীবনের অভিজ্ঞতা আর পরিশ্রম তাঁকে আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, যেটার আশায় তিনি কোনদিনও অভিনয় করেননি। শুধু ভালোবেসেই করে গেছেন অভিনয়টা। আজ শরীরের বয়স তাঁকে থামাতে পারেনি, কারণ মনের বয়স এখনও অনেক কম! এখনও তিনি প্রতিটি চরিত্রে এমন সহজভাবে মিশে যান যে দর্শক ভুলে যান তিনি অভিনয় করছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অভিনেতা দেবের সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শকদের বিশেষভাবে টেনেছে। সেইসব ছবির সাফল্যে তাঁদের রসায়ন আরও একবার প্রমাণ করেছে, প্রজন্মের পার্থক্য মুছে দিতে পারে ভালো কাজ আর পারস্পরিক বোঝাপড়া। তাঁর সংলাপ, মুখভঙ্গি আর নির্ভেজাল অভিনয় দর্শকের মনে যে বাস্তবতার ছোঁয়া আনে, সেটাই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় শক্তি। এদিকে বয়স আশি পেরিয়ে গিয়েছে অনেকদিন, তবে তিনি বিশ্বাস করেন এখনও কিশোর!

খুব তাড়াতাড়ি বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর নতুন ছবি ‘কেনো দূরে থাকো’, নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে আরও পর্দা কাঁপাবেন তিনি। ‘টনিক’ আর ‘প্রধান’-এর পর দীর্ঘদিন পর্দা থেকে দূরে, আবার বড়পর্দায় ফেরার সিদ্ধান্ত কেন? এমনটাই প্রশ্ন করেছিল সংবাদ মাধ্যম। প্রবীণ এই অভিনেতা প্রথমে গম্ভীরভাবেই উত্তর দেন, “গল্প ভালো লেগেছে তাই করেছি ছবিটা, আবার কেন করেছি তার কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি?” চারিদিকে থমথমে পরিবেশ দেখে নিজেই হাসিতে ফেটে পড়েন। তারপর আসল কারণ জানিয়ে বলেন, “আগের কথাগুলো নিছক মজা ছিল।

আসলে এই যে এতগুলো লোকের সঙ্গে কথা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে এটাই তো পরম প্রাপ্তি। এর জন্যই বারবার পর্দায় ফেরার ইচ্ছে হয়।” এরপর সেই চেনা প্রশ্ন করা হয় তাঁকে, নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে অনেক প্রবীণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাজ করতে সমস্যা হয়। এই প্রসঙ্গে অভিনেতার কী মত? তাঁরও কি তরুণদের সঙ্গে মিশতে অসুবিধা হয় না? প্রশ্নটা চেনা হলেও, অভিনেতার উত্তর কিন্তু সবাইকে অবাক করে দেওয়ার মতো! তিনি বলেন, “এই বিষয়ে একজনের উদাহরণ দিচ্ছি।

আরও পড়ুনঃ “বাবা কখনও চাননি আমি সিনেমায় আসি, ছ’বছর আমার কোনও কাজ দেখেননি!” — KIFF’র মঞ্চে বীণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগঘন স্বীকারোক্তি, কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ কেন আবার বাংলায় ফিরতে চান অভিনেত্রী?

ওই যে লম্বা দাড়ি ছিল যে ঠাকুরের, কবিতা লিখতেন। যাঁর নাম করে যে কোনও বৈতরণী পার করে ফেলা যায়। সে তো বাংলার মাটিতেই জন্মেছিলেন, তাঁর থেকেই একটু শিখছি যে কিভাবে প্রবীণদের সঙ্গে কম আর নবীনদের সঙ্গে বেশি মেশা যায়। তিনিও এটাই করতেন, আটের জীবনও দেখেছিলেন, আঠেরো আবার আশিও– আমিও যদি একটু সেটাই পারি। যাঁদের সঙ্গে এখন কাজ করছি, তারা অপরিচিত নয় তো! তাদের এই বয়সটা তো আমিও পার করে এসেছি, অসুবিধা হবে কেন?” তাই আজও তিনি বাংলা ছবির এক অপরিহার্য মুখ, যিনি বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেন– নিষ্ঠা আর ভালোবাসা থাকলে শিল্পীর বয়স কেবল সংখ্যাই।

You cannot copy content of this page