‘স্ত্রীর ক্ষেত্রে জিভ-চোখ খু’বলোনোর হু’মকি, আর জি করের নির্যা’তিতার সময় সেই রাগ কোথায় ছিল?’ ‘নারী নিরাপত্তার চিন্তা, না সহানুভূতি পেতে এসব করছেন?’ রাজকে দ্বিচা’রিতার অভিযোগে কাঠ’গড়ায় তুলল নেটপাড়া!

গত সপ্তাহে কলকাতায় মেসিকে (Messi Kolkata) ঘিরে যে ছবিটা কল্পনা করেছিলেন আপামর বাঙালি, তা শনিবার অল্প সময়ের মধ্যেই বিশৃঙ্খলা আর ক্ষোভে ঢেকে যায়। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পরিস্থিতিতে যখন প্রশ্ন উঠছে ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি নিয়ে, ঠিক সেই সময়েই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhashree Ganguly)। কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু ব্যর্থতার সব দায় সবাই তাঁকেই দেয়! মেসির সঙ্গে ছবি পোস্ট করার পর থেকেই শুরু হয় কটাক্ষ, যা দ্রুত ছাড়িয়ে যায় যুক্তির সীমা।

প্রথমে প্রশ্ন তোলা হয় তাঁর সেখানে যাওয়ার অধিকার নিয়েই। এরপর ধীরে ধীরে আক্রমণের ভাষা আরও কুরুচিকর হয়ে ওঠে। শুধু পেশা নয়, টেনে আনা হয় শরীর থেকে পরিবার এমনকি সন্তানদের প্রসঙ্গও! শুভশ্রী নিজেও বলেন যে, নিজের থেকে সেখানে উপস্থিত হননি আর ছবি তোলাটা কর্মসূচির মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সেই ব্যাখ্যাও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি। বরং আক্রমণ ক্রমশ ব্যক্তিগত স্তরে নেমে আসে, যা অনেকের কাছেই উদ্বেগজনক বলে মনে হয়।

এই পরিস্থিতিতে রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty) মাঠে নামেন। তিনি একদিকে শনিবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন, অন্যদিকে স্পষ্ট করে দেন যে এই ঘটনার সঙ্গে শুভশ্রীর কোনও যোগ নেই। দর্শক হিসেবে মাঠে যাওয়ার অধিকার তাঁরও আছে, যদিও তিনি যাননি। রাজের বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল নারীদের উদ্দেশে কটূক্তি নিয়ে তাঁর অবস্থান। তিনি জানান, কোনও নারীকে নিয়ে নোংরা ইঙ্গিত বা কুৎসা ছড়ানোকে তিনি ঘৃণা করেন এবং এমন কিছু দেখলে তিনি চুপ করে থাকবেন না।

তিনি বলেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে তিনি যদি দেখেন কোন নারীর সঙ্গে এমন অবিচার হচ্ছে, প্রয়োজনে তিনি অপরাধীর জিভ-চোখ খু’বলে নিতে পারেন! সেই প্রতিবাদী ভাষাই যেন নতুন করে আগুনে ঘি ঢেলেছে এবার। কারণ, এই বক্তব্যের পরেই সমাজ মাধ্যমে পাল্টা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, সামাজিক দায়িত্ব আর দ্বিচারিতা নিয়ে। সমাজ মাধ্যমে শুরু হয় রাজের কথার তীব্র সমালোচনা। বহু মানুষ মনে করিয়ে দেন, গত বছর আরজি করের সেই নির্ম’ম ঘটনার সময় একই রকম জোরালো প্রতিবাদ কোথায় ছিল?

যখন এক নিরীহ ছাত্রীকে অত্যা’চার করে খু’ন করা হয়েছিল, তখন রাজ কেন এই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেননি? এই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে সবার মুখে। অনেকেই বলেন, “তখন তো গোটা কলকাতা, এমনকি দেশের বাইরেও প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল। কিন্তু সেই সময় তো রাজের এই অবস্থান এতটা দৃশ্যমান ছিল না!” ফলে আজকের বক্তব্যকে অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থে আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া বলেই দেখছেন। সমালোচনাকারীদের আরও একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে রাজ শুধু একজন পরিচালক নন।

আরও পড়ুনঃ ক্যা’ন্সারের বিরুদ্ধে চারটি অস্ত্রোপচার বদলে দিয়েছে চেহারা, তবুও অদম্য মানসিক শক্তি দিয়ে পাশে থেকেছেন স্ত্রী! অভিনেতার আলোয় দাঁড়িয়ে যিনি ছায়া হয়ে লড়েছেন, শরিব হাশমির জীবনে স্ত্রীর অসীম ত্যাগের গল্পটা জানেন?

তিনি একজন জনপ্রতিনিধিও, আর সেই দায়িত্বের জায়গা থেকে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধেও একইরকম সরব হওয়া উচিত ছিল বলে তাঁদের মত। কটাক্ষ করে কেউ কেউ লিখছেন, “আজ যখন স্ত্রীকে নিয়ে আক্রমণ হয়েছে, তখনই নারীদের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবাদের ভাষা এত তীব্র।” “ব্যক্তিগত স্বার্থের আঘাত সারাতে, নারীদের প্রসঙ্গ টেনে সহানুভূতি নিচ্ছেন!” এতে আদৌ কি সব নারীর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা যাচ্ছে, নাকি বিষয়টি শুধুই ব্যক্তিগত সীমার মধ্যেই আটকে থাকছে? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।