“আজ আমার জীবনে যা আছে, তাতেই আমি সম্পূর্ণ!”— কেরিয়ারের ঊর্ধ্ব গগনে সফল কেরিয়ার ছেড়ে বেছে নিয়েছেন সংসারকে, প্রেম নয়, বাবা-মায়ের পছন্দের বিয়েতেই জীবনের মানে খুঁজে পান তিনি! বরাবরই ব্যতিক্রমী অভিনেত্রী রুশা চট্টোপাধ্যায়

এক সময় ছোটপর্দায় ছিলেন তিনি একেবারে ঘরের মেয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর মুখ না দেখলে অনেক দর্শকেরই দিন অসম্পূর্ণ মনে হত। এমন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘রুশা চট্টোপাধ্যায়’ (Roosha Chatterjee) কিন্তু বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ অন্যরকম জীবন। আলো-ঝলমলে বিনোদন দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে এখন তিনি সংসারী নারী, মা এবং এক স্থিত, সংযত জীবনের প্রতিনিধি। পেশার শীর্ষে থেকেও বাবা-মায়ের পছন্দ করা মানুষকে বিয়ে করে সংসারকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি আজও অটল।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে অভিনয় থেকে সরে আসেন রুশা। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, আর পর্দায় ফিরবেন না। তাঁর কথায়, অভিনয় জীবনের প্রতিটি চরিত্র তাঁর মনে অমলিন, কিন্তু জীবনের পরের অধ্যায়ে তিনি চেয়েছেন অন্যরকম স্থিতি। সেই অধ্যায় শুরু হয় অশোকনগরের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অনুরণ রায়চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে।

Arranged Marriage

বাবা-মায়ের পছন্দেই হয়েছিল সেই বিয়ে, আর তাতেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের সুখ। রুশা ও অনুরণের সংসার এখন বিদেশে। তাঁদের ঘর ভরিয়ে রেখেছে এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান— অনুষা। মেয়ের নামের মধ্যেই যেন মিশে আছে তাঁদের দু’জনের ভালোবাসা ও বন্ধনের রেশ। দীপাবলিতে মেয়ের ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে। পেশায় স্বামী এক প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, বহু বছর ধরে বিদেশে কর্মরত। তবে সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন রুশা।

কখনও স্বামীর উচ্চতা নিয়ে, কখনও বিদেশের জীবনে মানিয়ে নেওয়া নিয়ে। কিন্তু তিনি এসবের কোনও উত্তর দেননি, বরং নীরব থাকাকে বেছে নিয়েছেন নিজের মর্যাদা বজায় রাখার উপায় হিসেবে। এক সময়ের ব্যস্ত শুটিং শিডিউল, আলো-আড়ালের দৌড়ঝাঁপ এখন অতীত। রুশা এখন সংসার, পরিবার ও মেয়েকে কেন্দ্র করেই দিন কাটান। সম্প্রতি কলকাতায় ফিরেছেন তিনি, বিয়ের পর এই প্রথম এতদিনের জন্য দেশে থাকা। ঘরের মেয়ে ফিরে আসায় কাছের মানুষরা যেমন আনন্দে আপ্লুত, তেমনই পুরনো সহকর্মীরাও তাঁকে ঘিরে নস্টালজিক।

আরও পড়ুনঃ “আগের পৃথিবী অনেক বেশি আন্তরিক ছিল, বিগত কুড়ি বছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে!” “এখন কাউকে শাসন করা যায় না, উপযাচক হয়ে পরামর্শ বা জ্ঞান দেই না”— নতুন প্রজন্ম নিয়ে অকপট অঞ্জনা বসু! নতুন পৃথিবীর পরিবর্তনে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো আন্তরিকতা?

একসময়ের জনপ্রিয় মুখ আজ একেবারে সাধারণ, অথচ সুখী গৃহবধূ— এই রূপান্তরই তাঁকে করে তুলেছে আরও বাস্তব, আরও আপন। রুশা চট্টোপাধ্যায় আজ অনেক তরুণীর কাছে এক উদাহরণ। জীবনে কখনও কখনও সাফল্য মানে শুধু আলো বা করতালি নয়— বরং মনের শান্তি ও নিজের নির্বাচিত জীবনের প্রতি পরিতৃপ্তিও হতে পারে এক বড় অর্জন। অভিনয় জীবনের অধ্যায় তিনি গর্বের সঙ্গে শেষ করেছেন, আর শুরু করেছেন নতুন এক গল্প— যেখানে তিনি শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং এক পরিপূর্ণ নারী, মা এবং জীবনের সাহসী সহযাত্রী।