টলিউডের সম্মানিত মুখ সব্যসাচী চক্রবর্তী নামটি শুনলেই দর্শকের মনে ভেসে ওঠে ফেলুদার রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চারের স্মৃতি। তবে তাঁর কণ্ঠে আর অভিনয়ে যে বহুমাত্রিকতা রয়েছে, তা কোনও একটি চরিত্রে আটকে রাখা সম্ভব নয়। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি উপস্থিত হয়ে নিজের অভিনয় জীবন, ফেলুদা চরিত্র, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। প্রায় এক ঘণ্টার এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই অভিনেতা ফিরে যান তাঁর অভিনয় জীবনের শুরুর দিনগুলিতে। কীভাবে টেকনিশিয়ান হিসেবে যাত্রা শুরু করে পরে অভিনয়ের জগতে প্রবেশ, মঞ্চ থেকে টেলিভিশন হয়ে টলিউড এবং বলিউডে পা রাখা—সবই উঠে আসে সরল অথচ আবেগপূর্ণ ভঙ্গিতে। ‘তেরো পার্বণ’ সিরিয়াল, ‘সাথী’, ‘পরিণীতা’ থেকে শুরু করে ‘খাকি’ কিংবা ‘দিল সে’র মতো হিন্দি ছবিতে তাঁর অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি জানান, “ভাষা নয়, চরিত্রই আসল—যেটা মনে দাগ কাটে, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
অবশ্য যে চরিত্র তাঁকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়, তা হল সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি ফেলুদা। এই চরিত্রের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ এতটাই গভীর যে তিনি বলেন, “ফেলুদা একটা দায়িত্ব, একটা ব্রত। এই চরিত্রটা আমি করেছি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকে।” তবে এই প্রসঙ্গেই তিনি জানিয়ে দেন, সত্যজিৎ রায় নিজেও চায়নি ফেলুদার আরও সিনেমা তৈরি হোক। এই তথ্য শুনে দর্শকদের অনেকেই চমকে যেতে পারেন। তবু সব্যসাচীর মতে, পরিচালকের সিদ্ধান্ত যেমন সম্মাননীয়, তেমনি অভিনেতার চেষ্টা হওয়া উচিত চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলা।
এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ ছিল তাঁর অবসর নিয়ে ভাবনা। স্পষ্ট ভাষায় সব্যসাচী বলেন, “আমি অবসর নিতে চাই। গত দুই বছরে ২২টি হিন্দি কাজ ফিরিয়ে দিয়েছি। এখন এমন কোনও চরিত্র নেই যেটা আমাকে টানে।” এ কথায় ফুটে ওঠে তাঁর শিল্পভাবনা—কাজ শুধু সংখ্যা নয়, তার মান এবং গভীরতাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কোনও কাজ যদি তাঁর মনের মতো না হয়, তবে তাতে যুক্ত হওয়ার কোনও মানে নেই। তাই ভবিষ্যতে খুব বেছে বেছে কাজ করবেন, নতুবা আর করবেন না।
আরও পড়ুনঃ ঐন্দ্রিলাকে হারিয়েছেন, মা চতুর্থবার ক্যা’ন্সারে আক্রান্ত— তবুও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ঐশ্বর্য! বোনের স্বপ্নকে সঙ্গী করেই এবার অভিনয়ের পথে দিদি! দেখা যাবে কি ছোট পর্দায়?
সাক্ষাৎকারের একেবারে শেষভাগে উঠে আসে মানুষ সব্যসাচীর কথা। ব্যক্তিগত জীবনের নানা টানাপোড়েন, স্ত্রীর মন্তব্য—”অবসর নিলে খিটখিটে বুড়ো হয়ে যাবেন”, কিংবা ছেলের অভিনয়ে আসা—সবই উঠে আসে হালকা রসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে। তাঁর মতে, অভিনয় জীবন হোক বা বাস্তব জীবন—দুটি ক্ষেত্রেই স্পষ্টতা ও সততা জরুরি। এই সাক্ষাৎকার যেন শুধুমাত্র একটি শিল্পীর মুখোমুখি হওয়া নয়, বরং একজন চিন্তাশীল মানুষকে নতুন করে আবিষ্কার করা।