“শ্যুটিং সেটে চিৎকার, পরিচালকের এক কথায় অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত!” কেন নিজেকে অভিনয় থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন শতাব্দী রায়?

কিছু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও উপস্থিতি দিয়ে পর্দায় আলাদা ছাপ রেখে যান। তেমনই একজন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। বাংলা সিনেমার পর্দায় তাঁর অবদান আজও অমলিন। দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য তিনি একের পর এক জনপ্রিয় সিনেমায় কাজ করেছেন। তাঁর সাবলীল অভিনয়, সহজাত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক অভিব্যক্তি বরাবরই প্রশংসিত হয়েছে।

তবে বিগত কয়েক বছরে তাঁকে আর নতুন কোনও সিনেমার পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্নটা থেকেই যায়— কেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী হঠাৎ করে সিনেমার জগৎ থেকে সরে এলেন? বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা গেলেও অভিনেত্রী এতদিন এই প্রসঙ্গে একেবারে নীরবই ছিলেন। অবশেষে সেই নীরবতা ভাঙলেন স্বয়ং শতাব্দী রায়। জানালেন ঠিক কী ঘটেছিল তাঁর অভিনয় জীবনের শেষ পর্যায়ে, যে কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেওয়ার।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন শতাব্দী রায়। জানান, একটি সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীনই নাকি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আর অভিনয়ের প্রতি সেই টান নেই। সিনেমার নাম ছিল ‘কৃষ্ণা কাবেরী’। শ্যুটিংয়ের একদিন ছিল একটি বিশেষ দৃশ্য, যেখানে স্কুটি চালিয়ে আসতে হবে তাঁকে। সঙ্গে ছিল কিছু টেকনিক্যাল ডিটেলস, যেমন দুই পাশে বড় বড় দুধের টন। এই দৃশ্য শ্যুট করতে গিয়েই ঘটেছিল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।

শ্যুটিং চলাকালীন সেই দৃশ্যটি ক্যামেরায় ধরার জন্য ক্যামেরাম্যান বারবার প্যান অ্যাঙ্গেল পরিবর্তন করছিলেন। কিন্তু কোনওভাবেই দৃশ্যটি নিখুঁত হচ্ছিল না। বারংবার শট দিতে গিয়ে রোদ, ক্লান্তি এবং পুনরাবৃত্তি দেখে শতাব্দী বিরক্ত হয়ে পড়েন। একসময় তিনি ক্যামেরাম্যানের উপর তীব্র রেগে যান এবং সেটে চিৎকার করে বসেন। ঠিক তখনই পরিচালক শ্যুটিং বন্ধ করে লাঞ্চ ব্রেক ঘোষণা করেন।

লাঞ্চ ব্রেকের সময় পরিচালক তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে কথা বলেন। জানান, ‘‘এর আগেও তো বহু কঠিন দৃশ্যে কাজ করেছো, এত বিরক্তি কখনও দেখায়নি। হয়তো তুমি এখন আর এই কাজটাকে এনজয় করছ না।’’ এই কথাগুলোই নাকি শতাব্দীর মনে গভীর দাগ কাটে। তিনি উপলব্ধি করেন যে সত্যিই হয়তো তিনি নিজের কাজের প্রতি সেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

আরও পড়ুনঃ বুবলাইয়ের আচরণে আঘাত পেল স্বতন্ত্র! এদিকে, কমলিনীর খুশি সহ্য হয় না বড়ো ছেলের! তবে, কি অশান্তির কারণে নতুন আবার ছেড়ে চলে যাবে কমলিনীর সংসার? 

সেই দিনের ঘটনাই শতাব্দীর মনে বড়সড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার বীজ বুনে দেয়। শ্যুটিং শেষ করেই বাড়ি ফিরে তিনি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। তারপরই স্থির করেন যে আর নতুন কোনও সিনেমায় কাজ করবেন না। একসময় যাঁর অভিনয় ছিল প্রাণের আর একমাত্র আনন্দের জায়গা, সেই কাজ থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। বহুদিন পর নিজের মুখে এই ঘটনা জানিয়ে একপ্রকার নিজের সেই অদৃশ্য বিদায়-এর কারণ দর্শকদের সামনে তুলে ধরলেন শতাব্দী রায়।