টলিউড থেকে বলিউড, বিভিন্ন ভাষা এবং ঘরানার চরিত্রে বারবার নিজেকে সফলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee)। পর্দায় যতটাই রঙিন বা বহুমুখী চরিত্রে অভিনয় করুন, তিনি বাস্তব জীবনে ঠিক ততটাই সংযত! প্রযুক্তি-নির্ভর সময়ে দাঁড়িয়েও তিনি যেন একটু আলাদা পথে হাঁটেন, তাঁর কাছে প্রয়োজনের বাইরে সবকিছুই বিলাসিতা। খুব অল্প মানুষই তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরে স্থান পান। তাঁর বিশ্বাস, সারাক্ষণ আড্ডা বা প্রযুক্তিতে ডুবে থাকলে মন অশান্ত হয়ে যায়। আর অভিনয়ের মতো কাজে মনটাই তো আসল সম্বল।
এই একাগ্রতার ভাবনাই তাঁর কাজ বাছার নীতিতেও স্পষ্ট। নিজে কোনদিনও টাকার জন্য অভিনয় করেননি, বরং চরিত্রের ভার বুঝে বেছে নিয়েছেন, অথবা চরিত্রটি তাকে দেখেছে অভিনয় যোগ্যতার জন্য। তাই সম্প্রতি কাস্টিংয়ে সমাজ মাধ্যমের জনপ্রিয়তাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে তিনি প্রকাশ্যেই আপত্তি তুলেছেন। এভাবে অভিনেতা বিচার করার ধারণাকে তিনি যুক্তিবিরোধী বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, ক্যামেরার সামনে শুধু দাঁড়ালেই অভিনয় হয় না। অভিনয় মানে অনুভূতির ভেতর দিয়ে যাওয়া, চরিত্রকে নিজের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া।
তাই যেসব কাজ করতে গিয়ে আনন্দ পান, সেগুলোকেই তিনি গুরুত্ব দেন। নাম বা বাজারমূল্য তাঁর কাছে মুখ্য নয়। যেকোনও মাধ্যমই হোক, তাঁর উপস্থিতি দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার আরেক নাম। তবু এত বছরের অভিজ্ঞতার পরেও তিনি মনে করেন, অভিনেতার আসল পরিচয় তৈরি হয় কাজের প্রতি ভালোবাসা আর মাটির কাছাকাছি থাকা দিয়ে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই হয়তো তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে যখন চারদিকে অভিযোগ শোনা যায়।
অনেকেই বলে যে তাঁরা নাকি দাম্ভিক, আত্মকেন্দ্রিক, বড়দের সম্মান করতে জানেন না! শাশ্বত বিষয়টাকে প্রজন্মের লড়াই হিসেবে দেখেন না। বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি! একবার মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘পোশাক বদলানো বা বাথরুম ছাড়া মাধুরী মেকআপ ভ্যানে যাননি। অথচ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভ্যান থেকে নামাতেই কয়েকজন কয়েকজন লোককে বারবার ডাকতে হয়!’ কথাটা তির্যক হলেও বাস্তবের কাছাকাছি।
আরও পড়ুনঃ বাবিলের উদাসীনতা ও বর্ষার বিদায়ের পর নতুন সমীকরণ! বুবলাই-মিটিলের বাড়তে থাকা ঘনিষ্ঠতা কি পরিণতি পাবে বিয়েতে? ‘চিরসখা’য় বুবলাইয়ের সঙ্গে মিটিলের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে! দর্শকরাই চাইছেন এই নতুন জুটিকে?
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর দর্শন একই রকম স্পষ্ট। তাঁর মেয়ে অভিনয়ে করার ইচ্ছা জেনেও বাবা হিসেবে কোনও সুপারিশের পথ তিনি বেছে নেননি। বরং সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন যে, কাজকে ভালোবাসলে কাজ নিজেই কথা বলবে। এই বিশ্বাসটাই যেন তাঁর জীবনের মূল কথা। অভিনয় তাঁর কাছে পেশা বটে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি এক ধরনের সাধনা। আর সেই সাধনার জায়গায় অহংকার, হইচই বা বাড়তি চাকচিক্যের কোনও জায়গা নেই।






