রেডিয়ো-ক্যাসেট যুগ শেষ, ইউটিউব–ইয়ারফোনে বাজে বর্তমানে গানের নতুন সুর! এর মধ্যেই কি হারিয়ে যাচ্ছে পুজোর গানের চিরচেনা আবেগ? সত্যিই কি কমে গেছে শ্রোতার আগ্রহ—কি বলছেন রাঘব চট্টোপাধ্যায় এবং জোজো?

শারদীয়ার আমেজ মানেই শুধু নতুন জামা-কাপড় নয়, নতুন গানও অনবদ্য অংশ। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়—ক্যাসেট যুগ ফুরোনোর পরেও কি আগের মতো পুজোর গানের কদর আছে? উৎসব ঘনিয়ে আসতেই আবারও আলোচনায় এসেছে এই প্রসঙ্গ। কারণ বদলেছে মাধ্যম, বদলেছে ভোক্তাদের শুনবার অভ্যাস। ফলত রেডিয়ো-ক্যাসেটের দিন শেষ, জায়গা নিয়েছে টিভি, ইউটিউব কিংবা ইয়ারফোন। কিন্তু শ্রোতার হৃদয়ে কি রয়ে গেছে সেই আগের শিহরণ?

প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায় মনে করিয়ে দেন, কোনও কিছুর আধিক্য তার আবেদন কমিয়ে দেয়। তাঁর মতে, সারা বছর ধরে অতিরিক্ত সংখ্যক গান সামনে নিয়ে আসা হলে অপেক্ষার আনন্দটাই হারিয়ে যায়। রাঘব বলেন, “আগে পুজো মানেই আলাদা প্রত্যাশা থাকত। এখন যখন সারা বছর গান মুক্তি পাচ্ছে, তখন আলাদা করে পুজোর গান নিয়ে বসে থাকার মতো উত্তেজনা কমে যাচ্ছে।” তিনি জানান, তাই নিজে সচেতনভাবে বছরে সীমিত সংখ্যক গান প্রকাশ করেন, যাতে পুজোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আগ্রহও অটুট থাকে। এই বছরও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর নতুন গান ‘শরৎ মেঘে নতুন আলো’, যা তিনি নিবেদন করেছেন তাঁদের জন্যই, যাঁরা এখনও পুজোয় নতুন সুরের জন্য অধীর প্রতীক্ষায় থাকেন।

অন্যদিকে, গায়িকা জোজো মুখোপাধ্যায় দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছেন খানিকটা ভিন্ন পথে। তাঁর মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গান যেমন বদলেছে, তেমনই পুজোর গান আজও বিশেষ জায়গা ধরে রেখেছে মানুষের মনে। তিনি বলেন, “এই পরিবর্তন জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। নতুন প্রজন্মকে স্বাগত জানাতেই হবে। আর মানুষের কাছে পুজোতে মুক্তিপ্রাপ্ত গান আজও সাদরে গৃহীত হয়। পরিবর্তন তো সব ক্ষেত্রেই আসে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে পুরোনো আবেগ মুছে গেছে।”

অভিজ্ঞতা থেকে রাঘব আরও বলেন, গত এক দশকে গানের কথার মানও অনেক উন্নত হয়েছে। আগে কখনও কখনও সুর ভালো হলেও গানের কথা ততটা শক্তিশালী হতো না। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্ম সুন্দর লেখনী আর মনকাড়া সুরে গানে নতুন প্রাণ দিচ্ছে। গায়ক মনে করেন, এটাই পুজোর গানের ধারাবাহিকতাকে টিকিয়ে রাখছে।

আরও পড়ুনঃ “আমাকে তো ওরা…ভগবান যা করে মঙ্গলের জন্য!”— তর্ক-বিতর্কে না গিয়ে ভিন্ন সুরে শ্রাবন্তী জানালেন, কেন ‘ধূমকেতু’তে প্রথম নায়িকা হিসেবে তাঁকে নেওয়া হলেও, শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি? দায়ী করলেন কি শুভশ্রীকে?

একই টানে কথা বলেছেন জোজোও। তাঁর মতে, সঙ্গীতের বদল অনেকটা ফ্যাশনের মতো। পুরোনো ধারা হারিয়ে যায় না, বরং নতুন নামে, নতুন আঙ্গিকে আবার ফিরে আসে। তিনি মনে করিয়ে দেন, শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নবীনদের জায়গা করে দিতে হবে। নইলে সবটাই একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, রেডিয়ো-ক্যাসেট হারালেও পুজোর গান হারায়নি—শুধু রূপ বদলে নতুনভাবে প্রবেশ করেছে মানুষের জীবনে।