“সমাজ আমাকে ভয় পায়, আমিও ভয় পাই সমাজকে!” “গান দিয়েছে সম্মান, কেড়ে নিয়েছে অনেক!”— সমালোচনার জবাবে অকপট রূপঙ্কর! সমাজ মাধ্যমের কটাক্ষ বিধ্বস্ত রূপঙ্কর, গান ছাড়ার কথাও ভেবেছিলেন!

বাংলা গানের জগতে এক পরিচিত ও প্রভাবশালী নাম ‘রূপঙ্কর বাগচী’ (Rupankar Bagchi)। নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে আজও যিনি সমান প্রাসঙ্গিক, সমান শক্তিশালী কণ্ঠের অধিকারী। শুধু গান গাওয়াই নয়, সুর সৃষ্টি, আবহ নির্মাণ ও গানের কথা লেখার ক্ষেত্রেও তিনি নিজের স্বতন্ত্রতা গড়ে তুলেছেন। আধুনিক বাংলা গান হোক বা সিনেমার মেলোডি, বিজ্ঞাপনের আবহ বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অভিনয়—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর অবাধ বিচরণ। দীর্ঘ তিরিশ বছরের এই সুরেলা যাত্রা উপলক্ষে সম্প্রতি এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি, যার নাম ‘তিরিশটা বৃষ্টি’।

এই সন্ধ্যা ছিল শুধুই গানের, শুধুই রূপঙ্করের শিল্পীসত্তাকে ঘিরে। এই গানের সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয় শহরের এক নামী প্রেক্ষাগৃহে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রূপঙ্করের দীর্ঘদিনের অনুরাগীরা এবং তাঁর সঙ্গীত সফরের সাথীরা। অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেন নিজের জীবনের নানা দিক নিয়ে। গানের জগতে যাত্রা তাঁর জীবনে বহু প্রাপ্তির ঝুলিকে ভরিয়ে তুললেও, এর পাল্লা দিয়েই এসেছে কিছু অপূর্ণতা ও ব্যক্তিগত ক্ষতি। শিল্পী হিসেবে সাফল্য পেতে গিয়ে জীবনের কিছু অমূল্য মুহূর্ত মিস করেছেন তিনি।

বিশেষ করে মা-বাবার শেষ সময়ে তাঁর পাশে থাকতে না পারার আক্ষেপ আজও তাড়া করে তাঁকে। একজন বাবা হিসেবেও নিজেকে কোথাও যেন অসম্পূর্ণ মনে করেন রূপঙ্কর। নিজের কন্যার সঙ্গে সময় কাটানোর যেই প্রতিজ্ঞা তিনি করেছিলেন, বাস্তব জীবনে তা সবসময় রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি শিল্পীজীবনের চাপ ও চাহিদা তাঁকে কখনও কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকেও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। পেশাগত জগতে প্রশংসা যেমন পেয়েছেন, তেমনই কুৎসা ও সমালোচনাও তাঁকে পিছু ছাড়েনি।

সমাজ মাধ্যমে তাঁর কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বহু বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যার ফলে ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু মানসিক চাপে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপ থেকে তার গাওয়া গান সরিয়ে নেওয়া হয়। এসব বিতর্কের প্রভাব পড়ে তাঁর শিল্পীসত্তার উপরেও। মানুষের সহজ যোগাযোগের সুযোগকে তিনি একসময় উন্মুক্ত রেখেছিলেন, যেখানে বন্ধু, সহকর্মী এমনকি অনুরাগীদের সঙ্গেও সরলভাবে মিশতেন। কিন্তু ক্রমাগত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও ট্রোলিং তাঁকে ভেতর থেকে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।

গান ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। সেই কঠিন সময়ে স্ত্রীর জন্য আবারও গানের ফিরে আসেন। জীবন যেখানে বারবার তাঁকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, গানই আবার হয়ে উঠেছে তাঁর আশ্রয়। আজকের দিনে এসে রূপঙ্কর আর নিজেকে সকলের কাছে মেলে ধরতে চান না। অনেকটা আড়ালে থাকতে চান তিনি—মানুষের মুখোশধারী আচরণের থেকে দূরে। নিজেকে তিনি তুলনা করেন এক আরশোলার সঙ্গে, যাকে দেখে মানুষ যেমন ভয় পায়, তেমনই তিনিও ভয় পান এই সমাজের দ্বিচারিতাকে।

আরও পড়ুনঃ ষোলোআনা পূজোর গন্ধ! আবারও স্টার জলসার মহালয়ায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ রূপে কোয়েল মল্লিক! ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে শ্যুট, ছবি শেয়ার করে সুখবর জানালেন অভিনেত্রী!

সম্প্রতি কাশ্মীরের মর্মা’ন্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার আরও একটি মন্তব্য নিয়েও সমাজ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। রুপঙ্করের স্বীকারোক্তি, “আমি আরশোলা, বাইরে থেকে সবাই আমায় ভয় পায়। কিন্তু আমি আরও বেশি ভয় পাই! এইসব কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনও বিষয়েই কথা বলবো না।” সোজাসাপটা ভাষায় না বললেও, তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট এক শিল্পীর আত্মসম্মান, আঘাত ও অভিমান। অনেক অনুরাগী হারিয়ে যাওয়ার পরেও আজও তিনি বলেন – গানই তাঁর অস্তিত্ব, গানই তাঁর প্রতিরোধ।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।