রাজনীতিতে আদর্শ এখন ক্যালেন্ডারের পাতার মতো, বছরের শুরুতে একরকম, মাঝপথে অন্য। ঠিক একইভাবে রাজনীতিতে (Bengal Politics) ‘ঘর বদল’ এখন আর নতুন কিছু নয়। তবু শিশুশিল্পী থেকে নেতা হতে চাওয়া ‘সোহেল দত্তে’র (Sohail Dutta) কেরিয়ার যেন একটু বেশিই নাটকীয়! শিশুশিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বড় হয়ে যেন রাজনীতিতেই বেশি সক্রিয় তিনি। একদিন বিজেপির পতাকা হাতে তুলে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী আমার দায়িত্ব নেবেন,” পরদিনই বলেন, সেটা নাকি ভুল ছিল!
সেই ভুলটা শুধরাতেই আবার এখন তৃণমূলের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন, নির্বাচনের আগে গুছিয়ে নেওয়া খেলোয়াড়ের মতো। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে আশ্বাস মেলে, ক্যামেরা মেলে, সুযোগও মেলে—আর সেটাই যেন তাঁর রাজনৈতিক ‘আদর্শ’। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে যখন টলিউডে বিজেপির হাওয়া উঠেছিল, তখন অনেক তারকার সঙ্গেই সোহেলও মঞ্চে বলেছিলেন, তৃণমূলের কিছু বিষয় ভালো লাগত না, তাই বিরোধী দলে যাওয়া।
কিন্তু তার কয়েক মাস যেতে না যেতেই বুঝে গেলেন, এ দলটা তাঁকে মানায় না! এর কারণ? “নীতিগত আদর্শে মন বসেনি। শিল্পীদের সম্মান নেই।” সেই সোহেল ২১ জুলাই আবার তৃণমূলে ফিরে এসে বলছেন, “আমরা শিল্পীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাঁচি।” প্রশ্ন হচ্ছে, শিল্পের জন্য লড়তে গেলে কি বারবার দল বদল করতেই হয়? নাকি যেখানে বেশি লাইমলাইট, সেখানেই আস্থা জন্মায়? তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে সোহেলের উপস্থিতি যেন বিভিন্ন বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে।
তিনি কিন্তু বলছেন, “ফেরার পেছনে কোনও পাওয়ার লোভ নেই।” অথচ এরপরেই বলেন, “জীবনে একবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে চাই।” মানে গাছে উঠবেন, ফল খাবেন না—এই যুক্তি কি মানা যায়? যাঁরা তাঁকে এতদিন বিজেপির হয়ে কথা বলতে দেখেছেন, তাঁদের কি এত সহজে বিশ্বাস হবে যে তাঁর এই প্রত্যাবর্তন নিছক আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা? না কি এটা রাজনীতির পুরনো চাল, ভোটের আগে গা ঘেঁষে থাকা? সোহেল আজ যাই বলুন না কেন, তাঁর অতীত পিছু ছাড়বে না।
যেদিন শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বাড়িতে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেদিন বিশ্বাস করেছিলেন। আজ বলছেন—বাবা-মা মানা করেছিলেন, কিন্তু তিনি ভুল করেই ফেলেন। যদি একের পর এক সিদ্ধান্তই ভুল হয়, তবে আগামীতে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাও তো প্রশ্নবিদ্ধ! এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে জনতার প্রতিনিধি হতে চান, যিনি নিজের মতেই স্থির থাকতে পারেন না? তৃণমূলের পুরনো মুখ হিসেবে সোহেলকে ফেরানো হয়েছে বলেই তিনি আশ্বস্ত।
আরও পড়ুনঃ “মেয়েদের যদি বাবা-দাদা কন্ডো’মের প্যাকেট আনতে বলে তাহলে কি সেটা ভালো লাগবে শুনতে?” “ছেলেরা স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ডকে কন্ডো’ম আনতে বলতে পারে?”— বিতর্কের কেন্দ্রে মমতা শঙ্করের ‘ব্যক্তিগত’ মত, পাল্টা যুক্তিতে সমালোচকদের জবাব দিলেন মৌসুমী!
কিন্তু মানুষ তো ভুলে যাবে না, সেই শান্তি খোঁজার পথে তিনি একবার শাসক দলকেই ত্যাগ করেছিলেন। এবার ফিরেছেন নির্বাচনের মুখে। সেটা কাকতালীয়? না কি নতুন নাটকের শুরু? লোকে এখনই তাঁকে ‘সুবিধাবাদী’ বলছে। সামনে হয়তো তাঁকে দেখা যাবে ভোটের প্রার্থী হিসেবে ব্যানার-বিলবোর্ডে হাসতে হাসতে শহরজুড়ে পোস্টারে। কিন্তু মানুষ যে ক্ষমার থেকেও বেশি মনে রাখে ‘ঘর ভাঙার ইতিহাস’, সেটা সোহেল কি জানেন?
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।