বর্ষীয়ান শিল্পী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar) -এর সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকার ঘিরে তোলপাড় চারিদিকে। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, স্বামীকে নিয়ে তাঁর আপত্তি না থাকলেও, কখনও তাঁর বাবা বা ছেলেকে ‘স্যানিটারি প্যাড’ কিনতে দিতে পারেন না। কারণ সেই মানসিক আধুনিকতা তাঁর মধ্যে আসেনি। প্যাডের বিজ্ঞাপনও তাঁর কাছে অস্বস্তিকর। পাশাপাশি, তিনি গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখানোকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, এ ধরনের শিক্ষার কারণে ধ’র্ষ’ণের মানসিকতা আরও বেড়ে যেতে পারে।
তার কথা অনুযায়ী, শহরের মেয়েদের পোশাক দেখে ছেলেরা ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো হয়ে ওঠে, এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের মেয়েদের ধ’র্ষ’ণ হতে হয়। এই মন্তব্য সামনে আসতেই শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়ার ঝড়। মমতা শঙ্করের এই বক্তব্যকে অনেকেই প্রাচীনপন্থী এবং অপ্রাসঙ্গিক বলে কটাক্ষ করেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, একজন সমাজসচেতন শিল্পী হয়ে কীভাবে এমন সংবেদনশীল বিষয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন? সমাজ মাধ্যমে চড়ছে বিদ্রূপ, মন্তব্যের বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছে বিরাট এক বিতর্কের ঢেউ।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, মমতা শঙ্করের ভাইঝি তথা জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী ‘শ্রীনন্দা শঙ্কর’ (Sreenanda Shankar) সমাজ মাধ্যমে প্রকাশ্যে নিজের মত প্রকাশ করেন। যদিও তিনি মমতার নাম উল্লেখ করেননি, তবুও তাঁর পোস্টে ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। তিনি লেখেন, “বংশগৌরব আর প্রতিভা একজন মানুষকে চেনায় না, বরং তার চিন্তা আর বিশ্বাসটাই আসল।” সঙ্গে আরও যোগ করেন, “অনেক তারকাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেননি, তাই আজ বিরক্ত আর তিক্ত।” এই লেখাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, মমতার বক্তব্যের বিরুদ্ধেই কার্যত প্রতিবাদ জানালেন পরিবারের এক সদস্যই।
এরপর অবশ্য শ্রীনন্দাকে নিয়েও ট্রোল শুরু হয়। অনেকেই তাঁকে কটাক্ষ করেন যে তিনি নিজের পরিবারের নাম খাটো করছেন। এর জবাবে ফের একটি পোস্ট করেন শ্রীনন্দা, যেখানে তিনি স্পষ্ট লেখেন, “আমি আমার পরিবারের নাম কখনও ব্যবহার করিনি। নিজের কাজ আর কণ্ঠস্বর দিয়েই পরিচিতি পেয়েছি।” তিনি জানান, যাঁরা ধ’র্ষ’ক মানসিকতার প্রতি সহানুভূতিশীল, তাঁদের সম্মান তাঁর প্রয়োজন নেই। উপরন্তু, তিনি এও বলেন, “যদি ছোটবেলায় গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখা যেত, তাহলে অনেক খারাপ স্পর্শ এড়ানো সম্ভব হতো।”
আরও পড়ুনঃ আজও সম্পর্কের স্বীকৃতি না মেলায় কষ্টে ভাঙল স্বতন্ত্রর মন! জলার ধারে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েছিল কমলিনী! আঁচল টেনে স্বতন্ত্র বাঁচাল প্রাণ! সারা জীবন রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা নতুনের, কমলিনীর চোখে জল!
স্পষ্টতই, শ্রীনন্দা নিজের অবস্থানে অটল থেকে একটি সাহসী ও সমাজসচেতন বক্তব্য রেখেছেন। এই গোটা ঘটনাটি শুধুই এক পরিবারের মতবিরোধ নয়, বরং এটি সমাজে প্রোথিত কিছু কুসংস্কার এবং আধুনিক শিক্ষার টানাপোড়েনের প্রতিফলন। একজন প্রজন্মের শিল্পী হয়তো আজও অস্বস্তিতে পড়েন কিছু বিষয়ে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে, প্রতিবাদ করছে, সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে। জনস্বার্থে এমন আলাপচারিতা একদিকে যেমন স্পর্শকাতর, তেমনি সমাজের ভিত নাড়া দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।