“ভগবান যখন রঙ কেড়ে নিয়েছে আমার জীবন থেকে, আমি সাদাতে চলে এসেছি!” “এখন একটাই প্রার্থনা করি…”— একের পর এক স্বামী, বাবা-শ্বশুরের আকস্মিক মৃ’ত্যু পাল্টে দিয়েছিল সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়ের জীবন! শোকের ছায়া কাটিয়ে ফের কাজের জগতে ফিরলেন অভিনেত্রী!

টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়’ (Subhadra Mukherjee) অনেকদিন ধরেই রুপালি পর্দার আলো থেকে দূরে সরে ছিলেন। সদা প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য পরিচিত এই অভিনেত্রী ব্যক্তিগত জীবনের একের পর এক আঘাতে ভেঙে পড়েছিলেন। একসময় নিয়মিত হলেও ধীরে ধীরে অভিনয় থেকে দূরে সরে যান তিনি। কারণ, জীবনের একটা বড় অংশে ছায়া ফেলে গিয়েছিল আপনজনদের একের পর এক হারানোর শোক আর একাকীত্ব। সাজগোজ, রঙিন পোশাক— সব ত্যাগ দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে নিজেই জানালেন, জীবন যুদ্ধের কথা।

আজকাল তাঁকে বেশিরভাগ সময়েই সাদা পোশাকেই দেখা যায়। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের সকালটা ছিল অভিনেত্রীর কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। পুজোর প্রক্কালেই চির বিদায় নেন সুভদ্রার স্বামী ফিরোজ। রোজ রাতের মতোই খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমাতে গিয়েছিলেন তিনি। পরদিন সকালে পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছিল স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু হঠাৎই স্ট্রোক হয়, আর সেখানেই সব শেষ। মাত্র ৫৭ বছর বয়সী এক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে এভাবে হারানো, সুভদ্রার কাছে ছিল অকল্পনীয়।

স্বামীর এই আকস্মিক প্রয়াণে যেন সব রঙই ফিকে হয়ে গিয়েছিল অভিনেত্রীর জীবনের। শুধু স্বামী নন, একে একে শশুর এবং বাবাকেও হারাতে হয় তাঁকে। বারবার প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা তাঁকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা জানেন— এই সময়ে তিনি কথাই বলতে চাইতেন না। অল্প বয়সে বৈধব্য, তার সঙ্গে পরপর এতগুলো শোকের ভারে একসময় নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন সুভদ্রা। অভিনয় ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যান, যেন নিজের ভেতরেই লুকিয়ে পড়েন।

তবু দীর্ঘ নীরবতার পর অভিনেত্রী আবারও ক্যামেরার সামনে আসার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু ফেরার এই সিদ্ধান্তও এসেছে তাঁর কঠিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “ভগবান যখন রঙ কেড়ে নিয়েছে আমার জীবন থেকে, আমি সাদাতে চলে এসেছি। আজকাল আর রঙ ভালো লাগে না, সাদা জামা-কাপড় বেশি পরি। আমি আগে সারারাত জেগে থাকতাম, যদি স্বামী, বাবা বা শশুরকে দেখতে পাই। অনেক পাগলামো করেছি। স্বামী যেখানে মারা গেছিলেন ওখানে ইচ্ছা করে থাকতাম বেশি।”

আরও পড়ুনঃ অরিজিৎ সিং গাঁ’জা খায়? জুবিনকে মদ ছেড়ে গাঁ’জা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ভারত খ্যাত গায়ক! কেন শোনেননি জুবিন?

স্মৃতির ভার এখনও তাঁকে তাড়া করে। তবু আজও তিনি চেষ্টা করছেন নতুনভাবে বাঁচতে। সুভদ্রার বিশ্বাস, কাজই তাঁকে শূন্যতা থেকে টেনে তুলতে পারে। তাই তিনি জানিয়েছেন, ” যখন কাজ ছেড়ে দেব বলেছিলাম, যেখানেই যেতাম মানুষ হাত ধরে অনুরোধ করত না ছাড়তে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রতিদিন একটাই প্রার্থনা করি, মৃত্যুর আগের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত যেন মানুষের সেবা করতে পারি। ঈশ্বর আমাকে যেন সেই স্বাস্থ্য দেন, যাতে ওই মানুষগুলোর অনুরোধ আমি রাখতে পারি। আর কিচ্ছু চাওয়ার নেই আমার।”