ছোটবেলার অনেক প্রশ্ন, অনেক অবুঝ জিজ্ঞাসা— আমরা সবাই করে থাকি দাদু-ঠাকুমার কাছে। তবে সেই সৌভাগ্য যাদের হয়ে না, তারা সব কিছুর উত্তর খুঁজে নেয় বাবার কাছেই। বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় সঞ্চালিকা এবং অভিনেত্রী ‘সুদীপা চট্টোপাধ্যায়’ (Sudipa Chatterjee) তেমনই এক শৈশব কাটিয়েছেন। আজও বারবার সেই স্মৃতিতেই ফিরে যান তিনি। বাবাকে বহু বছর আগে হারালেও তাঁর মনে এখনও জীবন্ত হয়ে আছে সেই কথোপকথনের মুহূর্তগুলো।
একা বসে থাকলে মনে পড়ে, বাবা ধৈর্য ধরে কিভাবে সব কথা শুনতেন মন দিয়ে। এক কথায়, বাবার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সুদীপার জীবনের সবচেয়ে অমূল্য অধ্যায়। অভিনেত্রীর স্মৃতিচারণায় উঠে এলো অনেক নাজানা কথা। একটা সময় ছিল যখন বিয়ে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, ছোট্ট মেয়ের মতোই সরল ছিল। শ্বশুরবাড়ি বা সংসারের চাহিদা নয়, বরং বেনারসি শাড়ি আর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গয়নার প্রতি আকর্ষণেই বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
বাবার কাছে ছোট্ট মেয়ের সেই সরল স্বীকারোক্তিও যেন খুব গুরুত্বপূর্ন ছিল, আজও মনে মনে ভেবে খুশি হন সুদীপা। বাবার কাছ থেকে কখনও কোনও প্রশ্ন উপেক্ষিত হয়নি, সুদিপার কথায় এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাবা যেন সবসময় তাঁকে এক বিশেষ ভরসা দিতেন। মেয়ের অবুঝ কথাগুলোও গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন তিনি। মিষ্টি করে বলতেন, হবু শ্বশুর-শাশুড়ির মাথা নাকি চিবিয়ে খাবে মেয়ে!
এইসব খুনসুটি আজও সুদীপাকে মনে করিয়ে দেয় বাবার নিখাদ ভালোবাসা। বাবা তাঁর কাছে হিরোর থেকেও বড় ছিলেন, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাঁকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আজ সুদীপা স্বামী অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় এবং ছেলে আদিদেবকে নিয়ে নিজের সংসারে সুখী। তবুও মা-বাবার অভাব পূরণ হয় না। কিছুদিন আগে মাকে হারিয়ে তাঁর মনে আরও গভীর হয়েছে সেই শূন্যতা।
আরও পড়ুনঃ “বিগত পাঁচ বছরে শুধু বছরে একটা কাজ করে সারা বছর চালাতে হতো”— পেটের দায়ে বেচতে হয়েছে গাড়ি, বাড়ি! রাজনীতিতে যোগ দেওয়াই কি এমন করুণ অবস্থা হয় অভিনেতার?
বাবা-মাকে হারানোর পর জীবনের অনেক ছোট ছোট মুহূর্ত যেন নতুনভাবে অনুভব করেন তিনি। স্মৃতির পাতায় তাই এখনও বাবা-মাই তাঁর আশ্রয়। প্রিয়জনকে হারানোর পরও সুদীপার মনে তাঁদের ছায়া অটুট রয়ে গেছে। মায়ের অভাব এখন আরও তীব্রভাবে টের পান, আর বাবার প্রতিটি শেখানো কথা আজও পথ দেখায় তাঁকে। জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও এই সম্পর্কগুলোই তাঁকে সবচেয়ে বেশি শক্তি জোগায়।