অকালে হারানো আলো! ২০১৫ সালে ম’র্মান্তিক দু’র্ঘটনায় প্রয়াত হন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়! চাকরি ছেড়ে অভিনয়কেই উৎসর্গ করেছিলেন জীবন, আজ এক দশক পর মৃ’ত্যুবার্ষিকীতে সেই অনবদ্য শিল্পীর স্মৃতিচারণ! জানেন, ব্যক্তিজীবনে মানুষটা কেমন ছিলেন?

জীবনের মাঝপথে এমন কিছু মানুষ আসেন, যাদের চলে যাওয়া যেন এক ব্যক্তিকে হারানো নয়, একটা সময়কেও হারানো। প্রয়াত অভিনেতা ‘পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়’ (Pijush Ganguly) ছিলেন ঠিক তেমনই এক শিল্পী— যিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয়ের প্রতি অদম্য ভালোবাসা নিয়ে বেঁচেছিলেন। আজ ২৫ অক্টোবর সেই দিন, যেদিন তিনি এক দশক আগে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। আজ তাঁর স্মৃতিচারণায় ফিরে দেখা কিছু অজানা তথ্য। প্রথম জীবনে পীযূষ সরকারি চাকরি করেও তাঁর মন কখনো থিতু হতে পারেনি টেবিল-চেয়ারের গণ্ডিতে।

চাকরির সুবাদে মুম্বইয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু মঞ্চের আলো, সংলাপের উষ্ণতা, দর্শকের প্রতিক্রিয়া— এই সব কিছুর জন্যই একদিন ফিরে এলেন কলকাতায়। চাকরি ছেড়ে অভিনয়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন তিনি। জীবনের সেই সিদ্ধান্তই তাঁকে এনে দিল নতুন এক পরিচয়, একজন মঞ্চ ও পর্দার প্রিয় অভিনেতা হিসেবে।বরাবরই মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি ছিল শান্ত অথচ দৃঢ়। ব্রাত্য বসু, বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখোপাধ্যায় কিংবা রমাপ্রসাদ বণিক— যাঁদের সঙ্গেই কাজ করেছেন, তাঁদের নাট্যমঞ্চে পীযূষ হয়ে উঠেছিলেন এক নির্ভরযোগ্য সহশিল্পী।

সেই সময়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অভিনয় তাঁর কাছে শুধু পেশা নয়, বরং এক রকম দায়বদ্ধতা। পরে টেলিভিশনের পর্দায় এসে সেই একই মাধুর্য ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘জল নূপুর’-এর পরী পাগলীর স্যার চরিত্রে তিনি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন একেবারে ঘরের মানুষ হিসেবে। তাঁর সংলাপে, মুখভঙ্গিতে ছিল এক আশ্চর্য আন্তরিকতা, যা আলাদা করে চিনে নিতে বাধ্য করত দর্শকদের। তবে, তাঁর জীবনের গল্পটা মাত্র ৫০ এই অসম্পূর্ণ রেখে গেল ২০১৫ সালের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা!

হাওড়ার সাঁত্রাগাছিতে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটি কেড়ে নেয় এই প্রখর প্রতিভাকে। একটি অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে একটি বাস পিষে দেয় গাড়ির একাংশ। সঙ্গে ছিলেন নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেনও। একটুর জন্য তাঁর প্রাণে বেঁচে গেলেও, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় আর ফেরেননি। দীর্ঘ পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। চিকিৎসা চললেও, সমস্ত অঙ্গ বিকল হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে থেমে যায় তাঁর হৃদস্পন্দন। খবরটা শুনে শিল্পী সমাজ যেমন স্তব্ধ হয়েছিল, তেমনই সাধারণ দর্শকরাও যেন হঠাৎ শূন্যতা অনুভব করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ব্যক্তিজীবনে পীযূষ ছিলেন এক পরিমিত, সংবেদনশীল মানুষ। স্ত্রী এবং পুত্র ছিলেন তাঁর একমাত্র আপনজন। অবসর সময়ে ছবি আঁকা আর মান্না দের গান শুনতে ভীষণ ভালোবাসতেন। কাজের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা— সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন শিল্পীজগতের এক অত্যন্ত প্রিয় মুখ। হয়তো সেই কারণেই আজও তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এই দিনে। অভিনেত্রী মৈত্রী মিত্র যেমন লিখেছেন, “সময় বয়ে যায়, কিন্তু পীযূষ দা রয়ে যান আমাদের প্রতিটি সংলাপের মধ্যে, প্রতিটি অভিনয়ের মুহূর্তে।”

আরও পড়ুনঃ “বিজেপি বিপজ্জনক, তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত আর সিপিআইএম, কংগ্রেস দিশেহারা!” “সবাই ওদের দাস, ওরাই ঠিক করে দেয় শিল্পীর প্রতিবাদের ভাষা!”— কৌশিক সেন তীর ছুঁড়লেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে একসঙ্গে! অভিনেতার তির্যক বিশ্লেষণ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি!

দশ বছর পেরিয়ে গেলেও, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় যেন কোথাও হারিয়ে যাননি। তাঁর মঞ্চের সংলাপ, টেলিভিশনের চরিত্র, কিংবা পর্দার নীরব উপস্থিতি— সবেতেই যেন তিনি আজও বেঁচে আছেন। মৃ’ত্যুর পরও যাঁর কাজ কথা বলে, তিনিই আসল শিল্পী। পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় সেই পরম্পরারই প্রতিনিধি। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের কাঁদায়, কিন্তু তাঁর কাজ, তাঁর সহজ মানুষটি হয়ে থাকা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ভালো শিল্প কখনও মরে না, শুধু রূপ বদলায়। আজকের দিনে আমাদের তরফ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্বর্গীয় পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়কে।