“অনেক কথা বলার ছিল অনুভার”…মৃ’ত্যুর আগে শেষ ফোন!— অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তর রহস্যমৃ’ত্যু নিয়ে আজও ওঠে প্রশ্ন, মাধবী মুখোপাধ্যায় সামনে আনলেন মৃ’ত্যু ঘিরে সেই অজানা সত্য! দুই যুগের সন্ধিক্ষণের নায়িকা, কি কারণে এমন পরিণতি?

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘অনুভা গুপ্ত’র (Anubha Gupta’s Mysterious Death) মৃ’ত্যু আজও টালিগঞ্জের ইতিহাসে এক অসম্পূর্ণ প্রশ্নচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি, পৌষ সংক্রান্তির রাতে আচমকা মৃ’ত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে শহরে। গড়িয়াহাটের একটি নার্সিংহোম তাঁকে মৃ’ত ঘোষণা করে, কারণ হিসেবে বলা হয় মস্তিষ্কে র’ক্তক্ষরণ। কিন্তু তৎকালীন চলচ্চিত্র মহলে শুরু হয় জল্পনা। কেউ বলেন হৃদরোগে মৃ’ত্যু, কেউ বলেন আ’ত্মহ’ত্যা। অথচ মৃ’ত্যুর এক দিন আগেও বন্ধু মাধবী মুখোপাধ্যায়ের (Madhabi Mukherjee) সঙ্গে ফোনে অনেক কিছু বলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অনুভা।

সেই ‘অনেক কিছু’ আর বলা হয়ে ওঠেনি! অনুভার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক—প্রথমজন ছিলেন মোহনবাগানের তারকা ফুটবলার অনিল দে, দ্বিতীয়জন অভিনেতা রবি ঘোষ। অনিলের সঙ্গে কোনও সামাজিক বিয়ে হয়নি, তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন। পরে সেই সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে এসে অনুভা জড়িয়ে পড়েন রবি ঘোষের সঙ্গে। মাধবীর কথায়, রবি ঘোষকে বিয়ের জন্য তিনিই অনুভাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু আগের সম্পর্কের ছায়া যেন কাটেনি।

অনিল দে নিজে এসে অনুভাকে ফেরানোর দাবি তোলেন। এরই মাঝে রবি ঘোষের কালীঘাটের যৌথ পরিবারে অভিনেত্রী হওয়ায় অনুভার প্রতি আচরণ ছিল অত্যন্ত অপমানজনক। স্টুডিওতেই খাওয়া-দাওয়া করতেন, কারণ বাড়িতে ঠিকমতো খেতে পেতেন না—এমন অভিযোগ নিজেই করেছিলেন অনুভা। মৃ’ত্যুর পর অনুভার দেহে কোনও বাহ্যিক আ’ঘাত ছিল না, কিন্তু নার্সিংহোমের একাধিক কর্মীর দাবি ছিল, অনুভার মস্তিষ্কে ‘শিলনোড়া’র আ’ঘাতে র’ক্তক্ষ’রণ হয়েছিল।

যদিও এই দাবি প্রমাণিত হয়নি, কারণ মৃ’তদে’হের ময়নাতদন্ত হয়নি, হয়নি কোনও পুলিশি তদন্তও। তাই মৃ’ত্যুর সঠিক কারণ আজও অজানা। স্টুডিওপাড়া একদিনের জন্য স্তব্ধ হলেও, সেই শোক ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যায়। সবচেয়ে করুণ, এমন একজন গুণী অভিনেত্রীর মৃ’ত্যু যেন গোটা ইন্ডাস্ট্রির কাছে এক সংবেদনশীলতা-হীন ঘটনা হয়ে রয়ে যায়। মাধবী মুখোপাধ্যায় নিজের কণ্ঠে আজও বলেন, “অনুভাদি ছিলেন আমার দিদির মতো, মায়ের মতো। কিন্তু তাঁর মৃ’ত্যুরহস্য আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়।”

তিনি জানান, মৃত্যুর কিছুদিন আগে অনুভা তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী নির্মল বাড়িতে না থাকলে আসবেন, অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু সেই ‘অনেক কিছু’ আর বলা হল না। এমনকি মৃ’ত্যুর খবরও তাঁকে জানাননি কেউ। কেবল শ্রাদ্ধের দিন রবি ঘোষ তাঁকে জানিয়ে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। মাধবীর মতে, রবি ঘোষ হয়তো মানুষ হিসেবে ভালো ছিলেন, কিন্তু তাঁর পরিবার অনুভার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছিল। এই ঘটনার সঙ্গে অনেকের মনে পড়ে যায় আরেক রহস্যময় মৃ’ত্যু—মহুয়া রায়চৌধুরীর।

মাধবী মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়, “মহুয়া কিংবা অনুভা—দু’জনেরই স্বামী মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না। তবে তাঁদের চারপাশের আত্মীয়-স্বজনই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” অনুভা গুপ্তার জীবন শুরু হয়েছিল খেলার মাঠে, মোহনবাগানের সমর্থক হিসেবে। আর শেষ হয়েছিল এক নিঃসঙ্গ, অভিমানী, আর প্রশ্নে মোড়া জীবনের নিষ্পত্তিতে। মৃ’ত্যুর এত বছর পরেও উত্তর খুঁজে ফেরেন অনুরাগীরা, হয়তো কখনও সেই উত্তর যে আর আসবে না।

আরও পড়ুনঃ বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি অনিল চট্টোপাধ্যায়, তাঁর সাফল্যের আড়ালে ছিলেন স্ত্রী অনুভা চট্টোপাধ্যায়! কালজয়ী ‘কোমল গান্ধার’ তৈরি হত না তাঁর ত্যাগ ছাড়া! চিরকাল থেকেছেন আড়ালে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন আড়ালেই!

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।

You cannot copy content of this page