আটের দশকের বাংলা ছবির ইতিহাসে ‘ছোট বউ’ (Chhoto Bou) এক বিপ্লবের নাম। ১৯৮৮ সালের রথযাত্রায় মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবি টালিগঞ্জের চেনা গেরস্ত গল্পকে এমনভাবে পর্দায় তুলে ধরেছিল, যে বক্সঅফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিল অঞ্জন চৌধুরীর কলম। তাঁর সংলাপ, তাঁর গল্পের ভাষা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে ‘ছোট বউ’-এর ডায়লগ ক্যাসেট হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়। আটপৌরে সংসার, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর বাঙালির আবেগের ছোঁয়ায় ‘ছোট বউ’ হয়ে উঠেছিল ঘরের মেয়ের মতো আপন। সেই ইতিহাস ফের ফিরে এল ২০২৫ সালে!
এদিন এক ফ্রেমে ধরা দিলেন ‘ছোট বউ’ দেবিকা মুখোপাধ্যায়, ‘মেজ বউ’ চুমকি চৌধুরী আর ‘বড় বউ’ রত্না সরকার। ২৯শে জুন, রিনা চৌধুরীর পরিচালনায় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সোহাগ রাত’-এর ২৫ দিন পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ প্রদর্শনী ও সেলিব্রেশনেই এই মুহূর্তটি তৈরি হয়। যেই অঞ্জন চৌধুরী একের পর এক ‘বউ’ সিরিজ বানিয়ে দর্শকের হৃদয় জয় করেছিলেন, সেই পথেই পা ফেলেছেন তাঁর কন্যা রিনা। যদিও তাঁর ছবি একেবারে আলাদা – আধুনিক প্রেম, ধর্মীয় বিভেদের বিরুদ্ধে মাতৃত্বের জয়গান, আর সংলাপে বাবার ছায়া।
তবুও বাবার ঘরানার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি সাজিয়েছেন এই গল্প। সেই উপলক্ষেই একত্রিত হলেন টলিউডের তিন ‘বউ’। এই প্রথমবার দেবিকা, চুমকি ও রত্না একসঙ্গে। যাঁদের নিয়ে একে অপরের নাম শুনেছেন, কাজের কথা জানেন, কিন্তু এক ফ্রেমে তাঁরা কখনও আসেননি। দেবিকার লালপাড় সাদা শাড়ি তখন যেমন অঞ্জনের ‘ছোট বউ’-র প্রতীক ছিল, এখনও সেই আবেগে ভেজা তাঁর চোখ। বললেন, “আমি থাকব না একদিন, কিন্তু ছোট বউ থাকবে। কারণ এটা কেবল ছবি নয়, এক জীবনদর্শন।”
অন্যদিকে মেজ বউ চুমকি স্মরণ করলেন কিভাবে বাবার হাত ধরে তাঁর অভিনয় জীবনের শুরু। আর বড় বউ রত্না তো রসিকতা করে বলেই ফেললেন, “বড় বউ নিজের জন্য কিছু খায় না, বাড়ির সকলের জন্যই রান্না করে চলে।” সেই মুহূর্তেই যেন সেই চিত্রনাট্যই ফিরে এল বাস্তব জীবনে। এই মিলন শুধু স্মৃতিমেদুর নয়, বরং ভবিষ্যতের এক সম্ভাবনাও জাগাল। রিনা চৌধুরী জানালেন, তিনি নতুন করে ‘বউ’ সিরিজ ফিরিয়ে আনতে চান। এবার তাঁর স্বপ্ন তিন ‘বউ’-কে এক ছবিতে দেখা যাবে।
আরও পড়ুনঃ “বাবা ১ কোটি টাকা খরচ করেছে বেকার স্বামীর পেছনে!”— ‘চিরসখা’র সোহিনী আসলে স্বর্ণকমল নিজেই! সোহিনীর মতোই ঠকে গেছেন তিনি! ধারাবাহিকের সঙ্গে জীবনের যন্ত্রণা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, এবার মুখ খুলে সবটা জানালেন অভিনেত্রী!
তিনি আশাবাদী, এই তিন অভিজ্ঞ অভিনেত্রী আবার তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন। তিনজনকে নিয়ে তৈরি হবে এক নতুন গল্প, বাংলা সিনেমায় এ এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হবে। এই মিলনের ছিল আবেগ, গর্ব, স্মৃতি আর একান্নবর্তীতার ছোঁয়া। যে অঞ্জন চৌধুরী একসময় ‘বউ’ শব্দটিকে শুধু সম্পর্কের নয়, বিনোদনের মূলস্তম্ভ করে তুলেছিলেন, তাঁর স্মৃতির প্রতি এ এক নিঃশব্দ প্রণাম। সত্যিই, সেদিন ‘রাধা সিনেমা’-র প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ছবির ইতিহাসের পাতায় লেখা হল এক সোনালি মুহূর্ত।