অভিনয় থেকে দূরে সরেছেন, চলে গেছেন স্বামী, ৯১ বছর বয়সে স্মৃতির ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে একাকী জীবন কাটাচ্ছে ‘জন্মভূমি’র পিসিমা মিতা চ্যাটার্জি

বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম জনপ্রিয় মেগা সিরিয়াল ‘জন্মভূমি’ আজও দর্শকদের মনে জায়গা করে আছে। বিশেষ করে, ‘পিসিমা’ চরিত্রে অভিনয় করা মিতা চ্যাটার্জির ( Mita Chatterjee )নাম এখনও দর্শকদের স্মৃতিতে অমলিন। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী বয়সকে যেন একেবারেই তোয়াক্কা করেন না। এখনও তাঁর রূপের দীপ্তি এবং ফিটনেসে হিংসা হতে পারে অষ্টাদশীদেরও। কিছুদিন আগেই জি বাংলার জনপ্রিয় শো ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ ( Didi No 1)-এ উপস্থিত হয়ে আবারও দর্শকদের মন জয় করেছিলেন তিনি।

শৈশবের দুর্গাপুজোর কথা উঠতেই চোখে জল মিতা চ্যাটার্জির!

আসন্ন দুর্গাপুজোর আগে সম্প্রতি মিতা চ্যাটার্জি তাঁর ছোটবেলার দুর্গাপুজোর স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। পুজো তাঁর কাছে এখনও আগের মতোই স্পেশাল। তিনি বলেন, “দুর্গাপুজো মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি, যে সময়টায় সবকিছুই বদলে যায়।” তবে ছোটবেলায় পুজোর রকমফের নিয়ে মিতার অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। সেই সময়ের পুজোতে আজকের মতো এত আড়ম্বর ছিল না। বাড়ির পুজোই ছিল মুখ্য, সর্বজনীন পুজোর এত বড় আয়োজন ছিল কল্পনাতীত।

মিতা চ্যাটার্জি জানান, তাঁদের বাড়িতে পুজো না হলেও পাড়ার পুজো ছিল মহা উৎসব। সেই সময় দক্ষিণ কলকাতার ২৩ পল্লির দুর্গযিয়াদের আজকের মতো জনপ্রিয় ছিল না। বাঁশের ঘেরা সামান্য আয়োজনেই পুজো সম্পন্ন হত। কিন্তু মিতাদের আনন্দে কোনও খামতি ছিল না। সারাক্ষণ হৈহুল্লোড় করে সময় কাটালেও বিজয়া দশমীর সময় এলেই কান্নার রোল উঠত মিতার মুখে। তিনি বলেন, “কাঁদতে কাঁদতে এমন অবস্থা হতো যে, উপরের থেকে নিচে পড়ে যেতাম, সারা গায়ে রক্ত! প্রত্যেক বছর এটা ছিল যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছিল।”

মিতার এই ছোটবেলার অভিজ্ঞতা শুধুই কান্নার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এক মিষ্টি স্মৃতিও রয়েছে তাঁর। পাড়ার ঠাকুরের ত্রিনয়ন সাজানোর দায়িত্ব ছিল ছোট্ট মিতার। পাড়ার সকলে বলতেন, “তুই আমাদের ছোট মা, আর যিনি আসছেন তিনি বড় মা।” মিতার এই স্মৃতিগুলো এখনও তাঁর মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে, যা তিনি অকপটে শেয়ার করেছেন।

আরও পড়ুন: শেষ বয়সে অর্থের জন্য কাজ ভিক্ষে করতে হয় পরিচালকদের কাছে, নিদারুণ কষ্টে কেটেছিল কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন

বয়সকে হার মানানো মিতা চ্যাটার্জি এখনও নিজের শারীরিক এবং মানসিক ফিটনেস ধরে রেখেছেন। তাঁর কাছে বয়স সত্যিই শুধু একটি সংখ্যা। আজও তিনি অভিনয়ে সক্রিয়, এবং তাঁর ভক্তরা তাঁকে আগের মতোই ভালোবাসেন। তাঁর এই গল্পগুলো যেন আরও একবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় শৈশবের পুজোর আনন্দ আর মিষ্টি স্মৃতির কথা।