নারী নি’র্যা’তনকে (Violence Against Women) আমরা প্রায়ই বর্তমান সমাজের সমস্যা বলে ভাবি, কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই অন্যায় মানুষের ভিতরে বাসা বাঁধে এসেছে! বিশ্বের নানা স্থানে ‘ডা’ইনি’ সন্দেহ থেকে শুরু করে ঘরের ভেতরের নির্যা’তন পর্যন্ত, নারীকে নিজের মতো করে বাঁচতে গেলেই কোনও না কোনও যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেই দীর্ঘ যাত্রাপথের বিভিন্ন অধ্যায়েই মাথায় রেখেই আসছে নতুন নাটক ‘তিন এক্কে তিন’। আগামী ২০ নভেম্বর অ্যাকাডেমিতে চেতনা নাট্যোৎসবে এই নাটক মঞ্চস্থ হবে, যার লেখনীতে রয়েছেন প্রবাসী বাঙালি তম্বী চৌধুরী।
তাঁর লেখায় যেন যুক্ত হয়েছে বাংলার কষ্ট আর বোস্টনের কালিমা! এই নাটকের গল্প যত এগোবে, ততই দেখা যাবে একটি দেশের সীমানা কখনও অন্যায় থামাতে পারে না। যেমন বোস্টনের প্রাচীন ডাইনি-প্রথার ঘটনা, তেমনই ভারতের বহু আলোড়ন তোলা অপরাধ– সব মিলিয়ে নারী নিগ্র’হের ইতিহাস যেন এক দীর্ঘ কম্পমান নদী! নাটকের অন্যতম অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তীর মতে, সময় বদলেছে, শব্দ বদলেছে কিন্তু এক সময় যাকে বলা হত ‘ডা’ইনি হ’ত্যা’, এখন তারই রূপ ধর্ষ’ণ, নি,গ্রহ আর ক্ষমতার অপব্যবহার!
নাটকের দলও মনে করছে, এই পরিবর্তিত ভাষা দেখানোর মধ্যেই নিহিত থাকবে দর্শকের জন্য একটা প্রশ্ন যে সমাজ কি আদৌ বদলেছে? উল্লেখ্য, নাটকের অভিনয়ে থাকছেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়, নাট্যকার তম্বী নিজে এবং আরজি কর-কাণ্ডে নিহত তরুণী চিকিৎসকের চরিত্রে উষসী চক্রবর্তী। ঠিক এই চরিত্রটিই তাঁকে সবচেয়ে বেশি নাড়িয়ে দিচ্ছে। নানান নিগৃ’হীত নারীর জীবনকাহিনি পড়তে পড়তে তাঁর মনে জমছে যন্ত্রণা ও অস্বস্তির চাপ! উষসীর কথায়, “তীব্র আলোচনার বিষয় বানানোই লক্ষ্য নয়, বরং নিজের ঘর এবং নিজের সমাজের ভিত ধরে থাকা অন্ধকারটাকেও সামনে আনা জরুরি।
তাই দিল্লির ঘটনা যেমন জায়গা পেয়েছে নাটকে, তেমনই স্থান পেয়েছে আরজি করের নিষ্ঠুর অধ্যায়ও।” তবে মঞ্চের সামনে দাঁড়ানোর ভয় তাঁর এখনও কাটেনি অভিনেত্রীর। ক্যামেরার সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর পুরনো, কিন্তু মঞ্চে দর্শকের চোখের সামনে দাঁড়ানো এক অন্য দায়। তিনি মনে করেন, এই দায়ই সবচেয়ে কঠিন। কারণ চরিত্রটিকে যেভাবে তিনি অনুভব করছেন, সেভাবে দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি আর এই পথে অনেক সাহস লাগে। তারই শেষে মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে।
আরও পড়ুনঃ “যদি একজন রে’প করে, তাহলে সব মানুষই রে’প করবে…সবাইকে তুলে নাও!” “পৃথিবীটা সবার, শুধু মানুষ থাকবে আর কেউ না, এটা অন্যায্য দাবি!” প্রকৃতির প্রতি নিষ্ঠু’রতা, পথকুকুরদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন দেবশ্রী রায়! সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে নিয়ে রীতিমতো তোপ দাগলেন অভিনেত্রী!
নারী নির্যা’তন থামানোর উপায় নিয়ে উষসীর ভাবনাও নাটকের মতোই সোজা ও বাস্তব। তিনি মনে করেন, সমাজের নিয়ম ভাঙতে চাইলে শুধু কান্না বা পরিসংখ্যান নয়। প্রয়োজন প্রতিবাদ, রাস্তায় নামা আর নিজের ভিতর থেকে শক্তি খুঁজে নেওয়া। প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন তোলার সাহস, অপরাধীর বিরুদ্ধে কণ্ঠকে ধারালো করে তোলার প্রয়োজন আছে। সব পরিবর্তন একদিনে হয় না, কিন্তু পথ হাঁটলে গন্তব্য আসবেই। ঠিক এই বিশ্বাস থেকেই ‘তিন এক্কে তিন’ এগিয়ে যেতে চাইছে সময়ের বিরুদ্ধে, নীরবতার বিরুদ্ধে এবং সেই সব অবাঞ্চিত নিয়মের বিরুদ্ধে যা আজও মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়।






