পেটে ভাত নেই, হাতে টাকা নেই— অভাবে খাবারও জোটে না বর্ষীয়ান অভিনেতা শঙ্কর ঘোষালের! ছেলে-বৌমার কাছে অচেনা হয়েছেন তিনি! টাকা পাঠিয়ে নিঃসঙ্গ দাদাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, বোন রত্না ঘোষাল!

শুধু রুপোলি পর্দার নয়, বাস্তব জীবনেরও বর্ণময় চরিত্র তিনি। প্রবীণ অভিনেতা ‘শঙ্কর ঘোষাল’ (Shankar Ghoshal), যিনি একসময় বাঙালি দর্শকদের ঘরের মানুষ ছিলেন। আজ তিনি জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত ও অবহেলিত। শনিবার রাতে হঠাৎই তাঁর এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি ভগ্নস্বরে জানিয়েছেন— ‘সব টাকা-পয়সা শেষ, ব্যাঙ্কে আর কিছুই নেই।’ প্রতিদিনের খরচ কীভাবে চালান, তা নাকি তিনি নিজেও জানেন না। এই কথাগুলো শুধু দুঃখের নয়, এক প্রকার সমাজের বিবেককেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শঙ্করের অভিযোগ আরও গভীর ও যন্ত্রণাময়। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে ও বৌমা তাঁকে ঠিকমতো খাওয়ার খেতে দেন না। এমনকি ফোনে ডাকলেও তাঁদের কাছ থেকে সাড়া মেলে না। এককালে যাঁদের ঘিরে জীবন ছিল, আজ তাঁরাই যেন তাঁকে বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দিয়েছেন। তাঁর নাতি কেমন আছে, সে ঠিকমতো স্কুলে যাতায়াত কি না— এসব খবর জানার আগ্রহ থাকলেও, কেউ যেন তা জানানোর প্রয়োজনই বোধ করে না। প্রবীণ এই অভিনেতার অভিযোগে স্পষ্ট, শুধু আর্থিক নয়, মানসিক অবহেলাও তাঁকে প্রতি মুহূর্তে ঘিরে রেখেছে।

এই প্রথম নয়, শঙ্কর ঘোষাল আগেও একাধিকবার ভিডিও করে পরিবার থেকে দূরত্ব, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। কিন্তু এবার যেন পরিস্থিতি আরও করুণ। কারণ, নিজের পোস্ট করা ভিডিওটি কিছুক্ষণ পরেই ডিলিট করে দেন তিনি। ফোন করলেও কারও সঙ্গে কথা বলেননি। ঠিক এমন সময় সংবাদমাধ্যম যোগাযোগ করে তাঁর বোন রত্না ঘোষালের সঙ্গে, যিনি নিজেও প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং উত্তমকুমারের সহঅভিনেত্রী হিসেবে বহু ছবিতে কাজ করেছেন। রত্নার প্রতিক্রিয়া ছিল সরল কিন্তু বেদনাদায়ক!

তিনি বলেন,“দাদা ফোন করেছিলেন, বললাম টাকা পাঠাচ্ছি, খাবার আনিয়ে নিও।” রত্না আরও জানিয়েছেন, দাদা চান ফিজিওথেরাপি করাতে যাতে আবার হাঁটাচলা করতে পারেন, অভিনয়ে ফিরতে পারেন। তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান করেছেন বোন, কিন্তু তাঁর ক্ষোভও চেপে রাখেননি। তিনি বলেন, “দাদা যখনই টাকা চান, আমি দিই। কিন্তু তাও উনি খুশি হন না।” এ কথার মধ্যে একটা অসহায়তা ফুটে ওঠে— একদিকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এক প্রবীণ মানুষ, অন্যদিকে তাঁর প্রতি দায়িত্ব পালনে এগিয়ে থাকা এক বোন, যার নিজের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ চন্দ্রের মায়ের মুখ ফসকে সোহিনীকে দ্বিতীয় পুত্রবধূর স্বীকারোক্তি! গয়না চু’রির অভিযোগে কমলিনী কোণঠাসা! চন্দ্র-বর্ষার ষড়’যন্ত্রে তুঙ্গে উত্তেজনা! চন্দ্রর লোভই কি বাড়ির সর্বনাশ ডেকে আনবে?

সবশেষে, রত্নার কিছু কথায় যেন আজকের বাস্তব সমাজের প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি বলেন, “আজকের দিনে মুখ তুলে কাজ না চাইলে কেউ আর সুযোগ দেয় না।” এবং সেইসঙ্গে দাদার প্রতি তাঁর অনুরোধ, “ভিডিও করে রাগ দেখিয়ে লাভ নেই, সুস্থ হয়ে শুটিংয়ে ফিরে যাওয়াটাই ভালো।” শঙ্কর ঘোষালের এই গল্প শুধু এক অভিনেতার অবহেলিত জীবন নয়, বরং বহু প্রবীণ মানুষের নীরব যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি, যাঁরা একসময় আলোয় ছিলেন, আর এখন অন্ধকারে ঢেকে গেছেন— খুব চেনা, অথচ খুব অস্বস্তিকর এক ছবি।