অভিনয় টানে ছেড়েছিলেন চাকরি, কিন্তু এখন আর কেউ অভিনয়ের জন্য ডাকে না, কেমন আছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা বোধিসত্ত্ব মজুমদার?

সত্তরের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের একজন সফল চরিত্রাভিনেতা তিনি। কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল অভিনয়ের মাধ্যমে কিন্তু পরবর্তীকালে অন্য পেশা বেছে নেন তিনি। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে অভিনেতা ‘বোধিসত্ত্ব মজুমদার’ (Bodhisattva Mazumdar) এর। ১৯৭২ প্রথম ছবি ‘আবির্ভাব’ দিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ তাঁর, তারপর ১৯৮৪ সালে দূরদর্শনের সাপ্তাহিক নাটক দিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় আত্মপ্রকাশ। মাঝের সময়টায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করলেও যুক্ত ছিলেন অন্য এক পেশার সাথে।

জানা যায় কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মুক্তি পায়নি ‘আবির্ভাব’ ছবিটি। এরপর আর্থিক দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েন অভিনেতা এবং এক প্রকার পারিবারিক চাপের ফলেই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হন তিনি। সেই সময়ের জনপ্রিয় ইংরেজী সংবাদপত্র ‘স্টেটসম্যান’ এ কাজ করেছেন তিনি প্রায় ১৫ বছর। মাঝখানে চালিয়ে গেছেন অভিনয়ও। কিন্তু একটা সময়ের পর মনে হতে শুরু করে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে পারছেন না, একশো শতাংশ দিয়ে কাজ করতে পারছেন না।

অন্যদিকে টেলিভিশনের পর্দায় ধারাবাহিকের একটা জনপ্রিয়তা তৈরী হতে শুরু করে, সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে সাংবাদিকতার কাজটি অবশেষে ছেড়ে দেন তিনি। এরপর পাকাপাকি ভাবে তিনি বিনোদন জগতের একটি অংশ হয়ে ওঠেন। জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় কাজ তিনি মনে করেন ‘উনিশে এপ্রিল’কে। এছাড়াও ছোট পর্দার বেশ জনপ্রিয় মুখ তিনি, তবে তাঁর জীবনে নাটকের অবদান অনেকটাই। অভিনেতা জানান তিনি কলেজের নাট্যদলে যোগ দিয়েই অভুভব করেন তাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অভিনেতার সত্ত্বা।

এরপর থেকে প্রচুর নাটক করেছেন তিনি, অভিনেতার কথায় নাটক দিয়েই তিনি অভিনয়ের যা কিছু শিখেছেন। শুধু অভিনয়ই নয়, বরং জীবনসঙ্গীকেও খুঁজে পেয়েছিলেন নাটকের মঞ্চে। অভিনেত্রী ‘অনামিকা সাহা’র সাথে প্রথম আলাপ হয় ‘রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরী হলে’, একটি নাটকের সময় আর এরপর থেকেই প্রেমের শুরু। এরপর একাধিক নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে স্টার থিয়েটারে করা ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ নাটকটি সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতার। প্রথমদিকে পরিবার না মানলেও পরে ঠিক মেনে নিয়েছিলেন তাঁদের।

আরও পড়ুনঃ প্রায় এক বছর অভিনয় জগত থেকে দূরে! অবনতি হয়েছে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার! “এখন আর কেউ কাজে নিতে চান না”— আক্ষেপ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী তনিমা সেনের!

বিয়ের পরে কোল আলো করে আসে একটি কন্যা সন্তান। এই সবকিছুর মাঝেও কখন যেন পর্দা থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকলেন অভিনেতা, বর্তমানে আর তাঁকে সেইভাবে অভিনয় করতে দেখা যায়না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা বয়স আর ব্যাক্তিগত কারণেই পর্দা থেকে দূরে। সোজা কথায় তিনি বলেন এখন আর তাঁকে সেইভাবে ডাকা হয়না অথবা যে চরিত্রের জন্য ডাকা হয় সেটি তাঁর বিপরীত। অভিনেতা স্ত্রী অনামিকার আবার পর্দায় ফিরে আসা নিয়ে ভালোলাগা প্রকাশ করেন এবং জানান ভবিষ্যতে যদি তিনিও এমন মনের মত কাজ পান তবে পর্দায় ফিরতে আপত্তি নেই।