‘কুহেলি’ ছবি দিয়েই তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন দেবশ্রী রায়। তখন অবশ্য তিনি অনেক ছোটো। সেই সময় দেবশ্রী রায় নয়, তিনি পরিচিত ছিলেন তাঁর আসল নাম চুমকি নামেই। তাঁর নিজের নাচ নিয়ে কেরিয়ার তৈরির ইচ্ছে থাকলেও, মায়ের জন্য অভিনয়কেই বেছে নিতে হয় সেই সময়ের চুমকিকে।
‘কুহেলি’ পর তরুণ মজুমদার তাঁকে ডাক পাঠান হিন্দি ছবি ‘বালিকা বধু’র জন্য। ভালো করে সুন্দরভাবে সেজেগুজে সংলাপও বলেন তিনি। তিনি শেষ পর্যন্ত তিনি ছবিটি করেন নি। কারণ তরুণ মজুমদার দেবশ্রী রায়ের মাকে বলেন, “মিসেস রায়, আমি যে রকম ‘পাকা বাচ্চা’ চেয়েছিলাম চুমকি যে সে রকম নয়! ও এখনও খুবই সরল। মুখে-চোখে সেই সারল্যের ছায়া। ওকে দিয়ে তো আমার হবে না! আমার ‘পাকা বাচ্চা’ চাই”।
সেই সময় একটু দুঃখই পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। ভেবেছিলেন, কেন যে আর একটু পাকা হতে পারলেন না! তবে সেই আক্ষেপ ঘুচে যায় ‘দাদার কীর্তি’ ছবির সময়। সেবারে তাঁকেই স্থির করা হল বাণীর চরিত্রে। কিন্তু তাও এক জায়গায় বাধ সাধল। তরুণ মজুমদার ফের তাঁর মাকে বলেন, “আপনার মেয়ে আগামী দিনে আরও ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করবে। সেখানে তো চুমকি নাম মানাবে না! ওর নাম বদলাতে হবে।’’ মা তনুদাকে অনুরোধ জানালেন, ‘‘আপনিই তা হলে দায়িত্ব নিয়ে একটা নাম দিন। মৌসুমীর দিয়েছেন, মহুয়ার দিয়েছেন। আমার মেয়ের নতুন নাম না হয় আপনার হাতেই হোক”।
তা মেনে নিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। তাঁর হাত ধরেই ইন্ডাস্ট্রি পেল আগামীদিনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়কে। তিনিই চুমকি নাম বদলে তাঁর নাম রাখলেন দেবশ্রী। এরপর তো পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি দেবশ্রীকে। তরুণ মজুমদারের সঙ্গে একের পর এক হিট ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
দেবশ্রীর কথায়, তরুণ মজুমদার যেমন আদর করতেন, তেমনই বকুনিও দিতেন। ‘দাদার কীর্তি’র সেটে নাকি তিনি রুল নিয়ে আসতেন। কোনও ভুল হলেই পিঠে পড়ত রুলের ঘা। এইভাবে নিজের হাতে অভিনয় শিখিয়েছেন তিনি।
‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ ছবির প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, “আমার জ্বর। পর্দায় সন্তু-সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সরস্বতী পুজোয় ওই অবস্থাতেই আমায় পাঁজাকোলা করে নিয়ে আসা হবে। আমি এসে বসব। তাপস পাল গাইবেন, ‘হার মানা হার পরাব তোমার গলে’। গানের আগে সে দিনের মতো দৃশ্যগ্রহণ শেষ”।
দেবশ্রী বলেন, “তনুদা পইপই করে বললেন, ‘দেবশ্রী আজ বাড়ি গিয়ে কারওর সঙ্গে কোনও কথা বলবে না। কোনও গান বা সিনেমাও দেখবে না। খেয়ে, ঘুমিয়ে পড়বে। যেখানে আজ শেষ করলে ঠিক সেখান থেকে আগামী কাল শুরু করতে হবে’। আমি কথা শুনেছিলাম”।
কিন্তু তিনি বিগড়ে দিয়েছিলেন প্রথম ছবি ‘কুহেলি’র সেটেই। সেখানে একটা দৃশ্যে নাকি কোনওভাবেই কাঁদতে পারছিলেন না তিনি। চোখে গ্লিসারিন নিয়েও কান্না আসছিল না তাঁর। সেই সময় তরুণ মজুমদার খুব ধমক দেন তাঁকে। সেই ধমকেই তিনি এতই কেঁদে ফেলেছিলেন, শট শেষ হওয়ার পরও নাকি তিনি কেঁদেই যাচ্ছিলেন। অনেক করে বুঝিয়ে চুপ করানো হয় দেবশ্রী রায়কে।
অভিনেত্রী বলেন সেই সময় তিনি তরুণ মজুমদারকে শাসানি দিয়ে বলেছিলেন, “আমি তনুদাকে সেটে সবার সামনে শাসিয়েছিলাম, ‘আমায় এ ভাবে করলে তো! পাড়ায় এস এক বার। আমার হাতে অনেক গুন্ডা আছে। তাদের দিয়ে তোমায় মার খাওয়াব”। এই কথা নিয়ে নাকি অনেকদিন পর্যন্ত তরুণ মজুমদার খেপিয়েছেন তাঁকে।