তিনি বিখ্যাত ‘কলকাতার রসগোল্লা’ নামে। আজ ৬০ বছর বয়স পেরিয়েও এভারগ্রীন অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। ৭০-এর দশকের শেষের দিকে সেলুলয়েডের পর্দায় একজন সুঅভিনেত্রী হিসেবে বাংলা সিনেমায় আত্মপ্রকাশ ঘটে দেবশ্রী রায়ের। তবে শৈশব থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।
উল্লেখ্য, ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি এবং ৭০-এর দশকের শুরু থেকেই শিশু চরিত্রে বেশ কিছু ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি। বাংলা সিনেমায় দাপিয়ে অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর বাংলা জুড়ে ভক্ত সংখ্যা অসংখ্য। বলা যায় প্রায় ৫৬-৫৭ বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির অঙ্গ দেবশ্রী রায়। প্রচুর পুরস্কার, প্রচুর প্রশংসা তাঁর ঝুলিতে।
উল্লেখ্য, বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রখ্যাত অভিনেত্রী মহুয়া রায়ের অকাল মৃত্যুর পর যখন বাংলা চলচ্চিত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, সেই শূণ্যস্থান একার হাতে দেবশ্রী রায় পূরণ করেন। দাদার কীর্তি (১৯৮০), বিষবৃক্ষ (১৯৮৩), ভালবাসা ভালবাসা (১৯৮৫), জীবন (১৯৮৬), ঝঙ্কার (১৯৮৯), অপরাহ্ণের আলো (১৯৮৯), উনিশে এপ্রিল (১৯৯৪), লাঠি (১৯৯৫), ভয়(১৯৯৬), আজব গাঁয়ের আজব কথা (১৯৯৮) ইত্যাদির মতো একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। একটা সময়ে রাজনীতির কারণে অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন এই অভিনেত্রী। তবে দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি উপলব্ধি করেন রাজনীতি তাঁর জায়গা নয়। আর তাই আবারও ফেরেন অভিনয়ে। জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘সর্বজয়া’র হাত ধরে ফের পর্দায় ফেরেন তিনি। একটা সময় দারুন প্রশংসিত হয়েছিল এই ধারাবাহিকটি।
বাংলার এই জনপ্রিয়তম অভিনেত্রীকেই এবার অপবাদের মুখোমুখি হতে হল। বিরাট বড় অভিযোগের মুখোমুখি হতে হলো তাঁকে। উল্লেখ্য, কদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খবর প্রকাশ্যে আসে। অভিযোগ ওঠে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির জুনপুট কোস্টাল থানার বকশিসপুরে একদল মিউজিশিয়ান ও সাউন্ড আর্টিস্টকে আটকে রাখা হয়েছে। শিল্পীদের লক্ষ লক্ষ টাকার বাদ্যযন্ত্র এবং সাউন্ডের নানান সামগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের থেকে। অভিযোগ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়ের। তিনি হাজির না হওয়াতেই এই ঘটনা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি টাকা হাতিয়েছেন। আর এবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই সমস্ত অভিযোগের জবাব দিলেন দেবশ্রী রায়।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি কাঁথি পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু যাঁর উপর ভরসা করে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম সেই রহমান আমায় বলে, দিদি তুমি গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যাও। এরপর ফিরে এসে আমি শুনলাম ওখানে কী কী ঘটছে।’ তিনি জানিয়েছেন, আমার বেশিরভাগ অনুষ্ঠান যে তোচনদার হাত ধরে এরপর আমি তাঁকে ফোন করি এবং সমস্ত ঘটনা বলি। তোচনদা মদনদাকে ফোন করতে বলে। এই ঘটনায় অবাক হয়ে যায় মদনদা। এরপর উনি ওঁদের ছেড়ে দিতে বললেও ওঁরা সবাইকে ছাড়েনি।’
উল্লেখ্য, এই গোটা ঘটনায় তাপস দাস নামে এক ব্যক্তির দিকে আঙুল তুলেছেন অভিনেত্রী। বলেন ওর উপর ভরসা করাটাই আমার ভুল হয়েছিল । একইসঙ্গে তাপসের দিকে আঙুল তুলেই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাপসের জন্য এর আগেও সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। পুলিশ পারমিশন ছাড়া ওই ব্যক্তি অনুষ্ঠান অ্যারেঞ্জ করেছিলেন। অভিনেত্রীর দাবি কোনওরকম প্রোটেকশন ছাড়াই তাঁকে এর আগেও মানুষের মাঝে নামিয়ে দিয়েছিল ওই ব্যক্তি।
অভিনেত্রী সেই সঙ্গে আরও জানিয়েছেন, অনেকেই বলছেন আমি টাকা হাতিয়ে শো করিনি। কিন্তু আমি তো ওই মিউজিশিয়ান ভাইদের চিনিই না। তা সত্ত্বেও আমি নিজের দিক থেকে যেটুকু করা সম্ভব তার চেষ্টা করেছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু বলব না। কিন্তু আর চুপ থাকতে পারলাম না। এরপর থেকে কোনও অনুষ্ঠানে পুলিশ আছে কি না সেটা আগে দেখব আমি। এই যা শিক্ষা হল, বিশ্বাস করে ভীষণ ঠকলাম!’