অবিভক্ত ভারতের লাহোরে ১৯২৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন অভিনেত্রী উমা কাশ্যপ। পরে অবশ্য এই অভিনেত্রী পরিচিতি পান কামিনী কাশ্যপ (Kamini Kashyap) নামে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন কামিনী। পড়াশোনার কালচার অভিনেত্রীর পরিবারে ছিল। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর বাবা ছিলেন নামী উদ্ভিদবিজ্ঞানী। লাহোর কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হন অভিনেত্রী নিজে।
বলা হয়ে থাকে তৎকালীন সময়ে সবথেকে শিক্ষিত অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ পান অভিনেত্রী। চেতন আনন্দ তাঁকে ‘নীচা নগর’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এই ছবিতে অভিনয় করেই দারুন সাফল্য পান অভিনেত্রী। কান চলচ্চিচত্র উৎসবে ‘পাম দি’ওর’ পায় এই ছবিটি। সেই সঙ্গে অভিনেত্রীর কপালে জুটে ছিল উচ্চ প্রশংসা। চেতন আনন্দ অভিনেত্রীর নতুন নামকরণ করেন কামিনী। আসলে এই ছবিতে উমা নামের দুজন অভিনেত্রী ছিলেন। আর তাই দর্শকদের বোঝার সুবিধার্থে অভিনেত্রীর নাম বদল করা হয়।
জানা যায় প্রথমে অভিনেত্রী মুম্বইতে থাকতেন না। লাহোর থেকে আসতেন আবার শুটিং শেষ করে লাহোরে ফিরে যেতেন। কিন্তু এরপরই অভিনেত্রীর জীবনে আসে এক ট্র্যাজিক মোড়। দুর্ঘটনায় মারা যান কামিনীর দিদি। তাঁর দুই মেয়ে কুমকুম, কবিতা তখন নেহাতই শিশু। দুই বোনঝির জন্য কামিনী বিয়ে করেন তাঁর প্রয়াত দিদির স্বামী বি কে সুদ’কে। এরপর স্বামীর কর্মস্থল মুম্বাইতে থাকার জন্য তিনি ভালোভাবে সিনেমায় কাজ শুরু করেন।
শহিদ’, ‘পাগড়ি’, শবনম’, ‘আরজু’, ‘শাহেনশা’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘নাইট ক্লাব’, ‘জেলর’, ‘ দো ভাই’, ‘ব্যাঙ্ক ম্যানেজার’ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, অভিনেত্রীর পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্রেও সমান তালে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘পুরব অউর পশ্চিম’, ‘সন্ন্যাসী’, ‘শোর’, ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’, ‘দশ নম্বরি’, ‘আনহোনি’, ‘প্রেমনগর’ একাধিক সব সিনেমা।
এরপর দিলীপ কুমারের সঙ্গে তাঁর জুটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। দিলীপ কুমারের সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্ক ছিল তা অনেকেই জানেন। কিন্তু সেই সম্পর্ককে পরিণতি দেওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। কারণ দুই বোনঝি। যদিও দিলীপ কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা অজানা ছিল না তাঁর স্বামীর। তবে অভিনেত্রী কখনই নিজের কর্তব্যের সামনে নিজের প্রেমকে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে দেননি। দিলীপ কুমারের সঙ্গে সম্পর্ককে ছেদ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, তিনি এমন একজন অভিনেত্রী ছিলেন যিনি পরিবার এবং ক্যারিয়ার সমানভাবে ব্যালেন্স করেছেন গোটা জীবন। নিজের তিন ছেলে এবং দিদির দুই মেয়ের মধ্যে কখনও পার্থক্য করেননি তিনি। সবাইকে আগলে রেখেছিলেন। আজও দেশের গর্ব ৯৬ বছর বয়সী কামিনী কৌশল।