প্রথম জীবনে সাদা কালো তারপর রঙিন, বাংলা সিনে দুনিয়ায় সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে চলেছেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। যখন তাঁর মাত্র ১৬ বছর বয়স ছিল তখন তিনি অভিনয় দুনিয়ায় পা রাখেন। ১৯৫৭ সালে ‘মামলার ফল’ সিনেমায় অসামান্য অভিনয়ের জন্য দর্শক মনে তিনি পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেন।
প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার ছিলেন সন্ধ্যা রায়ের স্বামী। বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে গেলেও মনের সম্পর্ক তাঁদের শেষ পর্যন্ত অটুট ছিল। আর তাইতো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুদিন আগে পর্যন্ত সন্ধ্যা রায়ের খোঁজ নিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। অন্যদিকে স্বামীর শারীরিক সুস্থতার খবরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। তরুণ মজুমদারের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী।
‘পলাতক’, ‘আলোর পিপাসা’, ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’র মতো একাধিক সিনেমায় স্বামীর পরিচালনায় অভিনয় করেছেন সন্ধ্যা রায়। দুজনে মিলে একসঙ্গে স্বহস্তে তৈরি করেছেন কত অভিনেতা অভিনেত্রীকে। এরমধ্যে তাপস পাল, রাখি গুলজার, দেবশ্রী রায়, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া রায়চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তরুণ মজুমদার ও সন্ধ্যা রায়ের বিয়ের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন বাগীশ্বর ঝাঁ। একটা সময়ে অত্যন্ত সুখী দাম্পত্য থাকলেও পরবর্তীতে আর একসঙ্গে থাকা হয়ে ওঠেনি তাঁদের। ডিভোর্স না হলেও বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। আলাদা থাকলেও মানসিকভাবে কিন্তু তাঁরা একে অপরের থেকে আলাদা হতে পারেননি। প্রেমের এই বিয়ের ভালোবাসা ছিল গভীর।
নিঃসন্তান এই দম্পতির বৈবাহিক জীবনে একটা সময়ে জটিলতা চলে আসায় ভেঙে যায় তাঁদের সম্পর্ক। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মানসিক বন্ধন শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিল। শোনা যায় পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। জনপ্রিয় ওড়িয়া অভিনেত্রী মহাশ্বেতা রায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসতেই সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্যে ভাঙ্গন ধরে। আলাদা থেকেও সম্পর্ক থেকে গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে।
আর সেইজন্যই তো দূরে থেকেও প্রতিনিয়ত স্বামীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতেন তিনি। অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে । কিন্তু দেখতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু স্বামীর জন্য তিনি প্রার্থনা থামাননি। প্রতি মুহূর্তে ঠাকুর ঘরে বসে একটানা তিনি প্রার্থনা করে গেছেন, যাতে মানুষটা দ্রুত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু না ফেরেননি তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৪ঠা জুলাই ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হন বর্ষীয়ান প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদার। স্বামী হারানো বিরাট ধাক্কা ছিল বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের কাছে। তরুণ মজুমদারের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। গ্রাস করে একাকীত্ব। মানসিক শূণ্যতাকে সঙ্গী করেই এখন জীবন কাটাচ্ছেন বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।