‘আমি আর সপ্তর্ষি এখনও লেকের ধারে প্রেম করি, বাসে যাতায়াত করি’! সাধারণ প্রেমেই বিশ্বাসী সংসারী পোখরাজ ও তার বাস্তব স্ত্রী সোহিনী

তিনি দু’জনেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি’র অত্যন্ত পরিচিত মুখ। সিনেমা থেকে সিরিয়াল অবাধ গতিবিধি তার। তবে কি তাই? থিয়েটারের শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড তার। এই অভিনেত্রীর অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার ক্ষমতাও কেউ করেন না। তার অভিনয় ভীষণভাবে জীবন্ত। বলা বাহুল্য বোঝাই যায় না যে তিনি অভিনয় করছেন। নামি দুই অভিনেতা-অভিনেত্রীর সন্তান তিনি। কিন্তু কখনই তার কথায় আচরণে বা জীবনযাপনে সেই পারিবারিক ঐতিহ্য, অভিজাত্য ঝলকে ওঠে না।

তার কাছে অভিনয় প্রশিক্ষণ নেন টলিউডের নামিদামি অভিনেতা- অভিনেত্রীরা। তিনি একাধারে শিক্ষিকা, একাধারে অভিনেত্রী, একাধারে অভিনয়ের প্রশিক্ষক তিনি অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। তার পিতা হলেন নাট্য জগতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ‌এবং মা হলেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। তাদের পারিবারিক নাট্যদল নান্দীকার। কিন্তু নিজেদের নাট্যদল থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনদিনই নাকি বিশেষ পাত্তা পান নি সোহিনী। লাস্ট বেঞ্চার হয়েই থাকতেন তিনি। অর্থাৎ নিজের বাবার নাট্যদল হওয়া সত্ত্বেও কখনই সেখানে আধিপত্য দেখাতে পারেননি সোহিনী।

আসলে তার বাবা-মা কোনদিনও চাননি সোহিনী আধিপত্য দেখাক। নিজেদের মেয়েকেও আর পাঁচ জনের মতোই মনে করতেন তারা। আর সেই কারণেই কোনদিনও কারোর কাছে নিজের মেয়ে সোহিনীর জন্য দরবার টুকুও করেননি রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। অর্থাৎ বিখ্যাত মা-বাবার মেয়ে হওয়ার ফায়দা কোনদিনই পাননি তিনি। আর পাননি বলেই হয়তো আজও তিনি মাটির মানুষ।‌

সেই জন্যই অকপটে তিনি বলেন আজও অনায়াসে বাসে যাতায়াত করি। আজও আমি আর সপ্তর্ষি লেকের ধারে বসে, কফি খেতে খেতে আড্ডা দি, প্রেম করি। আসলে তারা যে বিখ্যাত হয়ে গেছেন তা তারা মনে করেন না সাধারণের ভিড়ে মিশে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ আবার প্রলয়। ‌ সেখানে সুপার কপ অনিমেষ দত্ত যেরকম প্রলয় তুলেছেন তার পাশাপাশি নিজের অভিনয়ে দর্শকদের মন জিতে নিয়েছেন অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত।

অকপটে অভিনেত্রী রাজের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন অনেকেই আমার ওপরে অনেক সময় বিশ্বাস দেখাতে পারেনি। কিন্তু রাজ আমার উপরে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছে। ও কখনও আমাকে নিয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকেনি। ও জানতো আমি পারবো। আর তাই অন্ধকারে একদিকে খাদ আর একদিকে জল আর মাঝে কাদার রাস্তায় আমাকে ছুটতে বলতেও ও দ্বিধা করেননি।‌ কারণ ও জানত আমি পারব।

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিকের সঙ্গে ১০ বছরের বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করেছেন অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত। সফল এই বিয়ের রহস্য কি? অভিনেত্রীর কথায় তারা দুজনেই ভীষণ রকমের অর্ন্তমুখী। একসঙ্গে প্রচুর ঘুরি। সিনেমা দেখি, গল্প করি, কবিতা পড়ি। বর্তমানে এক্কাদোক্কা ধারাবাহিকে পোখরাজের চরিত্রে অভিনয় করছেন এই অভিনেতা। পাশাপাশি থিয়েটার তো রয়েইছে।

সপ্তর্ষি মৌলিক ও অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত’র মধ্যেকার বয়সের বিস্তর পার্থক্য নিয়েও তারা আজ অন্য অনেকের থেকে অনেক বেশি সুখী।নিজেদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ১৫ বছর হলেও তা কখনই কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁদের দাম্পত্যে। নান্দীকারেই সোহিনীর সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়েছিল সপ্তর্ষির । তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। সোহিনীকে তিনিই দিয়েছিলেন বিয়ের প্রস্তাব। মেনে নিয়েছিলেন রুদ্রপ্রসাদ ও স্বাতীলেখা। বয়সে ছোট হওয়ায় বহু টিপ্পনী সহ্য করেছেন অভিনেতা সপ্তর্ষি মৌলিক। কিন্তু কোথাও ভালোবাসায় ঘাটতে পড়েনি।‌ আর আজ সবাই সম্মানের সঙ্গে তাদের ভালোবাসেন।