মান্না দে-র ‘কফি হাইস’ গানটা স্রেফ হেরে যাওয়া হতাশ মানুষের, যেন কাঁদুনি গাইছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবী প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রীর

মান্না দে-র ‘কফি হাউস গানটি একটি কিংবদন্তি গান। এই গানের গায়ক তো বটেই, গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষও কালজয়ী মানুষ। এখনও বন্ধুদের আড্ডায় বা কোনও রিয়্যালিটি শো-তে হামেশাই ভেসে ওঠে এই গান।সেই গানকেই এবার কটাক্ষ করলেন প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রী সোহিনী দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা ভীষণ ‘লুজার সং’! সাতটা ন্যাকার ঘ্যানঘ্যান। নস্টালজিয়ারও একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকা উচিত”।

কিন্তু হঠাৎ কেন এমন মনে হল তাঁর? এই নিয়ে এক সংবাদমাধ্যমে সোহিনী দাশগুপ্ত বলেন, “সকালে এফএম চ্যানেলে গানটি শুনতে শুনতে এ কথাগুলোই মনে হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছি। এবং এগুলো আমার উপলব্ধি”।

সোহিনীর এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের নীচে বেশ নামীদামী ব্যক্তিত্বের সমর্থন মিলেছে। এদের মধ্যে একজন এই প্রজন্মের সুরকার উপালী চট্টোপাধ্যায়। পরে যদিও নিজের কমেন্ট মুছে দেন তিনি। তবে বেশ কিছু নেটিজেনই এই পোস্টে কমেন্ট করে লিখেছেন যে প্রয়াত শিল্পীর এই গান নতুন প্রজন্মের কাছে ‘ভ্যাদভ্যাদে’।

আবার কেউ লিখেছেন, “ভেতো বাঙালি এই ধরণের গান বেশি খায়”। কারোর কথায়, “যেমন গানের কথা খারাপ, তেমন ফ্ল্যাট সুর”। কেউ কেউ আবার নচিকেতার ‘নীলাঞ্জনা’ বা ‘অনির্বাণ’কেও এই একই গোত্রে ফেলেছেন।

কিন্তু এরপরও নানান রিয়্যালিটি শো-তে এই গান কেন গাওয়া হয়? আজকালকার গান কেন শোনা যায় না?

এই বিষয়ে “আটের দশকে প্রথম এই গান শুনেছি। ভীষণ ভাল লেগেছিল সেই সময়। যেমন সুর, তেমনই গানের কথা। স্মৃতি তার সিংহভাগ জুড়ে। আস্তে আস্তে বড় হয়েছি। বারেবারে শুনতে শুনতে মনে হয়েছে গানে যেন একটি মেয়ের সম্পর্কেই বলা হয়েছে। সেই সময় হয়তো ওই গান সমসাময়িক ছিল। এখন সম্ভবত সেই সময় আর নেই। এই প্রজন্মের নিরিখে দেখলে আমার যেমন মনে হয়েছে বাকিদেরও সেটাই বক্তব্য, গানটি কিছু হেরে যাওয়া মানুষের।

কয়েক জনের হতাশ মানুষের ব্যর্থতার কাহিনী এই গান। তাঁরা তাঁদের দুঃখের কাঁদুনি গাইছেন”।

সোহিনীর কথায়, ‘কফি হাউজ’ গানটি স্মৃতি বিজড়িত। কিন্তু তাতে কেবল হতাশা আর দুঃখই থাকবে কেন? এই সাতজনের মধ্যে ব্যতিক্রম একমাত্র সুজাতা। কিন্তু তিনি সুখে রয়েছেন বলে তাঁর সুখকেও যেন কোথাও ঈর্ষা করা হয়েছে গানের মাধ্যমে।
সোহিনীর কথায়, “স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গা থেকেই ফেসবুকে এই মন্তব্য লিখেছি। সুরকার, গীতিকার বা গায়ককে আক্রমণ করতে নয়। পুরোটাই করেছি মজার ছলে”।

তাহলে আগামী প্রজন্ম যদি মজার ছলেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কোনও কাজকে এভাবেই ব্যাখ্যা করে, তাহলে? সোহিনীর জবাব, “আমি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের স্ত্রী বলেই কি পরিচালকের নাম উঠে এল”? তিনি আরও বলেন, “এই সমালোচনা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। একটি শিল্প সবার জন্য। তাকে ঘিরে ভাল লাগা বা মন্দ লাগা থাকবেই। সেটা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের কাজ হতে পারে। কিংবা মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়ের”।