ছোটবেলা থেকেই গানের জগতে বড় হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে ভাবলেন লোকের কাছে গান পৌঁছে দেবেন। ২০০০ সাল নাগাদ একটা গান এল যা মানুষকে মুগ্ধ করে দিল। সেই গান আজও জনপ্রিয়। ২৭ বছর গান নিয়ে রয়েছেন সংগীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য (Monomony Bhattacharya)। কিভাবে ২৭ বছর গানের জগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখলেন এ প্রশ্নের উত্তরে সংগীত শিল্পী জানান, “সাফল্য মানুষের একমাত্র বেঁচে থাকার চাবিকাঠি। তুমি যতই গান গাও, যদি সফল না হও তুমি সকলের কাছে একসেপ্টেবল নয়। কিন্তু আমার অনেক সময় মনে হয় এমনও অনেকজন আছে যারা সফল হয়নি তার মানে কি তারা বড় শিল্পী নয়, শিল্পী ছোট বড় বিভেদটা কখনো পছন্দ নয় আমার।”
সংগীতশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য (Monomony Bhattacharya) ২৭ বছরের গানের জগতের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, “২৭ বছরের জার্নিতে বুঝেছি তোমার একটা লবির খুব প্রয়োজন। তোমার একটা লবি থাকলে তুমি অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবে। যখনই আমি কোন কাজ করবো আমি আমার পছন্দের মানুষদের ঘিরে করব। কিন্তু এমন অনেক সময় হয় এই গানটা আমার পছন্দের শিল্পীর থেকে অন্যান্য অনেকে যারা ভালো গায়। কিন্তু আমি তাকে রেকমেন্ড না করে আমি নিজের কাছের লোককে রেকমেন্ড করব। এই লবি আগেও ছিল, আজও আছে এই একটা শিক্ষা আমার হয়েছে। এই লবি শুধু খারাপ নয়, ভালোও আছে। তোমার প্রফেশনে তুমি যদি সৎ থাকো, অল্প হলেও তোমার কাজের অভাব হবে না। তুমি কাজ করে ঠিক জীবনটা কাটাতে পারবে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে কার গান গাওয়ার মধ্যে সততা আছে, ডেডিকেশন রয়েছে।” এই ২৭ বছরের গানের জীবনে মনোময় ভট্টাচার্যের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা।
কারোর কাছে শ্রোতাদের ভালোবাসা পাওয়াটা সফলতা আবার কারোর কাছে প্লেব্যাক করাটা সফলতা। মনোময় ভট্টাচার্য (Monomony Bhattacharya) তার ছাত্র-ছাত্রীদের সফলতা হিসেবে কি শেখান, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার কাছে যারা গান শেখে তারা রিয়েলিটি শোতে মুখ দেখানোর জন্য আসে না। আমার কাছে গান শিখতে আসে। আমি আমার সারা জীবনে যেটুকু শিখেছি সেটুকু আমি তাদের দান করার চেষ্টা করি। আমি আমার ক্যারিয়ারের আগে টানা ২৫ বছর গান-বাজনা শিখেছি। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমার বাড়ি থেকে শুরু করে যে সকল জায়গায় গান শিখেছি সে সকল জায়গায় এমন গুরু পেয়েছি, আমি তাদের থেকে যা পেয়েছি এর কোন ঋণ শোধ করা যায় না।”
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে মনোময় ভট্টাচার্য (Monomony Bhattacharya) বলেছেন, “আমাদের জীবনটা অনেক বড়। আমার জীবন একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। আমি কোনদিনই কোন প্রডিউসারের প্রোডাক্ট নই। এমন আমার জীবনে হয়নি যে একটা গান বেরলো সাংঘাতিক পাবলিসিটি পেল। আমার যেটা হয়েছে ঘষতে ঘষতে হয়েছে, সেই জন্য আমি বলব, জীবন অনেক বড় ধৈর্য সবচেয়ে বেশি দরকার। যদি আমরা ১২ বছর খুব ভালোভাবে শিখতে পারি সেটা আমাদের লং রানে কাজ দেয়। যদি ধৈর্য ধরে থাকা যায় একটা না একটা দিন ঠিক আসবে।”
আরও পড়ুন: কেন ‘তেজ’ হয়ে পর্দায় ফিরলেন হানি? নিজের বিয়ে থেকে পর্দার বিয়ে নিয়ে অকপট অভিনেতা!
বর্তমান যুগের গানের শ্রোতাদের প্রসঙ্গে মনোময় (Monomony Bhattacharya) বলেন, “একটা গান তৈরি করতে কতটা খাটনি সেটা যদি শ্রোতারা বোঝেন, তাহলে পুরো গানটা শুনতে। আমি বলবনা যে কেউ পুরো গানটা শোনে না। শুনছেন তবে তার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যার জন্য আমার স্টুডিওতে গিয়ে খুব বিশেষ গান গাইতে ইচ্ছা করে না। আমার গান গাইতে লাগে ১ ঘন্টা কিন্তু সেটার আবার ভিডিও করতে লাগে ৬ ঘন্টা। ওই সেকেন্ড ফেজটা আমার কাছে খুব ক্লান্তিকর। গান শোনার কিন্তু এখন হয়ে গেছে গান দেখার। গানের ভিডিও করা মাস্ট হয়ে গেছে। এটার সাথে আমি নিজেকে খুব একটা মেলাতে পারছি না। এটা মানতে পারছি না প্রতিটা গানের সাথে আমায় নয় রাস্তায় নয় বাগানে গিয়ে হাঁটতে হবে। এর জন্য আমার গান রেকর্ড করতে ইচ্ছা করে না। কিছুদিন আগে এই ইউটিউবে আমার একটা গান দেওয়া হয়েছে, রিলস হয়েছে দেখছে ১০ হাজার লোক। আমাকে বলছো অপূর্ব হয়েছে। লোক ওই ৩০ সেকেন্ডেই খুশি। এতই যদি অপূর্ব লাগে যান গিয়ে পুরো ভিডিওটি শুনুন, সেই ধৈর্যটুকু নেই। এটা সবচেয়ে দুঃখের জায়গা। “