রবিবার ভোরের আলো ফুটতেই শহরের বুকে নৃশংস হত্যালীলা ঘটলো ঠাকুরপুকুরের (Thakurpukur Accident) রাস্তায়। রবিবার ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠেছে টলিপাড়া থেকে শহরবাসী—সবাই। ফুটপাত ধরে হাঁটা মানুষ, বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ পথচারীদের উপর আচমকাই উঠে পড়ে একটি দ্রুতগামী বিলাসবহুল গাড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়ির গতি ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে, ফলে একের পর এক মানুষ রাস্তায় ছিটকে পড়েন। একজন মৃত, কেউ গুরুতর আহত, কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে। আর এই ঘটনার পিছনেই উঠে এসেছে টলিউড (Tollywood) তারকাদের এক সন্ধ্যার গল্প।
ঘটনার সূত্রপাত নাকি একটি সেলিব্রেশন পার্টি থেকে। জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ভিডিয়ো বৌমা’-র টিআরপি সাফল্যে জমজমাট উৎসব ছিল দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত পানশালায়। সেখান থেকেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অভিনেতা-প্রযোজক-পরিচালকেরা। আরিয়ান ভৌমিক জানিয়েছেন, তিনি আগেই নিজের গাড়িতে চলে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যক্তিগত ড্রাইভার। পরে, তাঁর জোকারের বাড়ি থেকে আরও একদল বেরোন, সেই গাড়িতেই ছিলেন পরিচালক ভিক্টো, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেন এবং প্রযোজক শ্রিয়া বসু।
এর পরেই ঘটে যায় সেই দুর্ঘটনা, যা আজ রাজ্যের অন্যতম চর্চিত ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গাড়িটি হাঁসপুকুর থেকে বাজারের দিকে সজোরে ছুটে আসে, পথচারীদের ধাক্কা মেরে পালাতে গিয়েও ধরা পড়ে যায়। গাড়ির ভেতর থেকে যাদের বের করে আনা হয়, তারা কেউই স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। শহরের সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ। সমাজ মাধ্যমে নেমেছে নিন্দার ঝড়, উঠছে প্রশ্ন—তারকারা কীভাবে এত দায়িত্বহীন হতে পারেন?
টলিউডে এখন অস্বস্তির ছায়া। একের পর এক পরিচিত মুখের নাম উঠে আসায় সুশীল সমাজ স্তব্ধ। অনেকেই বলছেন, এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং এক রকম সামাজিক অবক্ষয়ের নিদর্শন। গ্ল্যামার জগতের নামী-দামি মানুষজন যখন মদ্যপ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ করেন, তার ফল কীভাবে ভোগ করেন সাধারণ মানুষ, এই ঘটনা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। একজন টিআরপি-সেলিব্রেটর যদি এমন আচরণ করেন, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই—এই সাফল্য কী শুধুই রেটিংস, নাকি নীতিরও পরাজয়?
আরও পড়ুনঃ “সোনিকার মতো একটা প্রাণ চলে গেল, আট বছর পরেও দোষী শাস্তি পায়নি, এরাও ছাড়া পেয়ে যাবে!”— ঠাকুরপুকুর কাণ্ডে অকপট বিক্রমের গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রেমিকা হারানো সাহেব!
এবার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলেছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ‘রুপঞ্জনা মিত্র’ (Rupanjana Mitra)। তাঁর কথায়, “এই ঘটনায় পরিচালক সিদ্ধান্তকে যেমন দোষী বলা হচ্ছে, তেমনই ড্রাইভিং সিটে না বসেও মহিলা দুজনও সমান দোষী। জেনে শুনে এমন মদ্যপ অবস্থায় দায়িত্বজ্ঞানহীন এক ব্যক্তির সাথে গাড়িতে করে যাওয়ার কী দরকার ছিল? এই ঘটনা ইচ্ছাকৃত বা অনিচাকৃত কোনরকমই ঘটনা নয়, বরং মূর্খতার প্রমাণ!” অভিনেত্রীর এই মন্তব্যেই যেন গ্ল্যামার-আবৃত বাস্তবের নির্মম মুখোশ খসে পড়েছে।