“একবার ‘তুই’ থেকে ‘তুমি’তে এলেই হবে সব সমস্যার সমাধান”— হাজারো ভাঙনের ভিড়ে আলাদা তাঁরা! সম্বোধনের ভাষা থেকে সম্পর্কের রসায়ন, বর্তমান ভাঙনের যুগে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার পাঠ দিলেন রাজা-মধুবনী!

টলিপাড়া এখন যেন শুধু সম্পর্ক ভাঙনের হাহাকারে ভরে উঠেছে। একের পর এক প্রিয় জুটির বিচ্ছেদের খবরে ক্লান্ত দর্শকরা। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়েও ‘রাজা গোম্বামী’ (Raja Goswami)‘মধুবনী গোস্বামী’ (Madhubani Goswami) এর সম্পর্ক যেন এক টুকরো আশার আলো। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একসঙ্গে পথ চললেও, তাঁদের সম্পর্ক আজও তাজা প্রথমদিনের মতোই। কখনও রাজা ব্যস্ত শ্যুটিংয়ে, কখনও আবার মধুবনী ছেলের স্কুলের কাজ বা পার্লারের দায়িত্ব নিয়ে ব্যাস্ত, তবু সংসারের ব্যালান্সে একটুও ঘাটতি পড়ে না। এর পেছনের রহস্য কি? কোন জাদু জানলে সস্পর্ক হবে এমন?

নিত্যদিন ভ্লগে যেভাবে তাঁরা নিজেদের জীবনের খুঁটিনাটি ভাগ করে নেন, তাতেই বোঝা যায় যে এই সম্পর্কটা কেবল নামের নয়, বরং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর বোঝাপড়ার জোরে তৈরি এক সত্যিকারের বন্ধন। রাজা বর্তমানে অভিনয় করছেন ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকে, যেখানে বাবিল চরিত্রে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন। অন্যদিকে, মধুবনী চালান নিজস্ব বিউটি পার্লার। দু’জনেই আলাদা কাজের চাপে থাকেন, সঙ্গে রয়েছে ভ্লগিংয়েরও চাপ। তার মাঝেও ছেলে কেশবের দায়িত্ব সামলে, নিজেদের সম্পর্কের যত্ন নেওয়ার কোনও খামতি রাখেন না তাঁরা।

Actor Raja Goswami and Actress Madhubani Goswami buy new three BHK flat

এই গুছিয়ে চলার পেছনে রাজার মতে, একটা বড় কারণ হলো—কোনও মুহূর্তে বিচ্ছেদের কথা না ভাবা। তিনি বলেন, “মা বাবার সাথে আমরা বা ভাই বোনের সাথেও বিচ্ছেদের কথা কখনোই ভাবি না, এর কারণটা ঠিক কি? কারণ এই সম্পর্ক গুলিতে ডিভোর্স হয় না!” তাঁর কথায়, যদি মন থেকে ঠিক করি যে এই সম্পর্ক থেকে বেরোনোর কোনও পথ নেই, তাহলে সেই সম্পর্কটাও একসময় ঠিকই সহজ হয়ে যায়। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে ভুল খোঁজার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় থাকে।

তার মধ্যে প্রধান হলো স্মৃতির ঝুলিতে থাকা ভালো মুহূর্তগুলিকে মনে রাখা। রাজা মনে করেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দোষ থাকে, কিন্তু দোষ দিয়ে সম্পর্ক বিচার করলে ভুল হবে। তাঁর মতে, “যদি আমরা ভাবি যে আমি সব ভালো, আর সামনের মানুষটা সব খারাপ, তবে তো আমরাই ভগবান হয়ে যাই! সম্পর্ক মানে হল সেই মানুষটা আমার জন্য কী করেছে, সেটা মনে রাখা। এবং মন খারাপের সময় বা ঝগড়ার মুহূর্তে হঠাৎ রেগে গিয়ে বড় সিদ্ধান্ত না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবলে, অনেক কিছুর সুরাহা হয়।”

আরেকটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ন বিষয় ভাগ করে নিয়েছেন রাজা—তা হল ‘সম্বোধনের ভিন্নতা’। রাজা আর মধুবনি জানান, সহকর্মী থাকার সময় তাঁরা একে অপরকে ‘তুই’ বলে ডাকতেন। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে আসার পরই সেটা বদলে ফেলেন ‘তুমি’তে। কারণ সম্পর্কে শ্রদ্ধা থাকা খুব জরুরি। যখন দুজন নতুন সংসার পাতেন কোথায় রাখতে হবে এক না একদিন সন্তান আসবে তাদের মাঝখানে তখন এই বাবা-মায়ের ‘তুই’ ডাকাডাকি দেখে পরবর্তীতে সেও সম্বোধন শিখবে না।

আরও পড়ুনঃ নতুনের বাড়িতে সকলে মিলে পৌঁছালো কমলিনীরা! বিয়ের মিথ্যে নাটক জমে উঠেছে! তবে, কি সকলের সামনেই নাটক ঘুরিয়ে দেবে স্বতন্ত্র? কমলিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে সে? কী হতে চলেছে চিরসখা ধারাবাহিকে?

এদিন রাজা বলেন, “যারা তুই করে ডাকে তাঁদের মধ্যে যে শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা নেই এমনটা নয়, বরং তুমি ভরসা বাড়ে, সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ে।” ছোটবেলার অভ্যাস বা বন্ধুত্বের কারণে অনেকেই হয়তো ‘তুই’ করে ডাকে, কিন্তু রাজা-মধুবনীর বিশ্বাস, সম্পর্কের মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মানবোধ জায়গা পায়, তাহলে তর্ক-বিতর্ক কম হয়, বোঝাপড়া বাড়ে। তিনি বলেন, ‘তুমি’ বললে যেমন ঝগড়া কম হয়, ‘আপনি’ বললে তো আরও কম!