সাবলীল অথচ মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়ে তিনি যে নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত, তা প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা, সর্বত্রই তাঁর উপস্থিতি মানেই আলাদা একটা অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, তিনি অভিনেতা ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee)। বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের এক অনন্য নাম, যিনি ‘এক আকাশের নিচে’ ধারাবাহিক থেকে শুরু করে হিন্দি ছবি ‘কাহানি’ কিংবা সাম্প্রতিক ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’-র মতো ছবিতে চরিত্রকে এতটাই বাস্তব করে তুলেছেন যে দর্শকের মনে তাঁর ছাপ স্থায়ী হয়েছে। কিন্তু অভিনেতা শাশ্বতর বাইরে খাদ্যরসিক মানুষটাকে চেনেন?
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এমন একজন মানুষ যিনি দেশ বিদেশের যেখানেই থাকুন না কেন, আদ্যপ্রান্ত বাঙালি। দু এক দিন বাইরের হাবিজাবি খেয়ে নিলেও বেশিদিন ভাত ছাড়া থাকতে পারেন না। তিনি বলেন বাঙালি খাওয়াতে যে শান্তি মেলে, পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, একবার দিল্লিতে একটি স্বনামধন্য ফাইভ-স্টার হোটেলে উঠেছিলেন তিনি কাজের সূত্রে। সেখানে কোনও রকম বাঙালি খাবার পাওয়া যেত না, দুদিন কষ্ট করে খেয়ে নিলেও তৃতীয় দিন সিদ্ধান্ত নেন বাঙালি খাবার খুঁজতেই হবে।
আগে বঙ্গভবন থেকে ভাত, ডাল খেয়ে শুটিংয়ে যেতেন তিনি। এই নিয়ে যথেষ্টই হাসাহাসি করেন সকলে কিন্তু তিনি পরিষ্কার করে দেন যে একজন বাঙালি হিসেবে নিজের খাওয়ার নিয়ে গর্বিত তিনি। আচ্ছা বাঙালি হিসেবে ঠিক কি কি পছন্দ করেন খেতে শাশ্বত? তিনি বলেন ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ আর ডিম সেদ্ধ ঠান্ডা হলেও খাওয়া যায়। এছাড়াও পছন্দের তালিকায় রয়েছে উচ্ছে সেদ্ধ এবং নিম বেগুন। গরমকালে প্রতিদিন বেলের শরবত তিনি খেয়েই থাকেন। তবে আর যাই খান না কেন, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ডিম সেদ্ধ মাস্ট!
বর্তমানে চেহারায় এসেছে পরিবর্তন, এর পেছনে কারণ কি ডায়েট? অভিনেতা বলেন কখনওই তিনি এসবে তেমন গুরুত্ব দেন নি, কিন্তু সম্প্রতি একটি হিন্দি কাজের জন্য বেশ কিছুদিন বোম্বেতে থাকতে হয়েছে। সেখানে অনিল কাপুর প্রতিদিন নাকি তাঁকে দিতেন খাওয়ার খোঁটা! অবশ্য শাশ্বত বলেন, এই খোঁটা তার ভালোর জন্যই দিতেন তিনি। শাশ্বতকে বুঝিয়েছিলেন অনিল যে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে তিনি আরও বেশিদিন অভিনেতার চেহারা ধরে রাখতে পারবেন।
এদিন এক সাক্ষাতকারে শাশ্বত বলেন, “৬৭ বছরের ওই অভিনেতা, অনিল কাপুরকে দেখে কিছুটা লজ্জা হয়েছে, সেই থেকেই খাওয়ার উপর কিছু বিধি নিষেধ চাপিয়েছে আর তাতে ভালোই ফল পাচ্ছি।” এছাড়াও ছোটবেলার স্মৃতি হাতরে বলেন, প্রথমবার ফাইভ স্টার রেস্তোরাঁতে খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা। জানান একবার স্কুলে পড়াকালীন শূন্য পাওয়ায় বাবা তাঁকে ধর্মতলার ফাইভ স্টারে খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তখন সেটা অপমান না বুঝলেও খাওয়ারের সেই স্বাদ আর নাম এখনও মনে রেখেছেন।
আরও পড়ুনঃ অপারেশন সিঁদুরে অনুপ্রাণিত টোটা রায়চৌধুরী! পোশাকে ফুটে উঠল দেশপ্রেমের ছাপ! সাধুবাদ জানাচ্ছেন বঙ্গবাসী! কোথায় মিলবে এই পোশাক?
তবে শাশ্বত এদিন বাঙালির খাদ্যাভ্যাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে বাঙালি নিজের খাদ্যাভ্যাস ও পদ্ধতি ভুলতে শুরু করেছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। এখন আর আগের মত থোর বা মোচা, এইসব রান্না হয় না বাঙালি বাড়িতে। কর্মসূত্রে বাড়ির সকলে ব্যস্ত থাকায় ইনস্ট্যান্ট ফুডেই ঝুঁকে পড়েছে বাঙালি। খাদ্যাভ্যাস ভুলে যাওয়ার এই স্বভাবেই বাঙালি হারিয়ে ফেলছে নিজের নিজস্বতা।