অঞ্জন চৌধুরীর ‘আব্বাজান’-এর সিক্যুয়েল! এবার কি টলিউডের হারানো মেজাজ ফেরাতে আসছেন অভিনেত্রী রিনা চৌধুরী?

যখন একের পর এক তারকাখচিত ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছে, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন— টলিউডে কি তবে গল্পের সংকট? বাংলা ছবির সেই গন্ধ, সেই আবেগ কি হারিয়ে যাচ্ছে? আজকালকার সিনেমাগুলোর ঝাঁ-চকচকে লুক, বিদেশি লোকেশন আর ‘স্টার’-এ ভরসা করেও দর্শক টানতে পারছে না। অথচ একটা সময় ছিল, যখন বাংলার মাটির গন্ধমাখা গল্পগুলোই গড়ে তুলত ছবির সাফল্যের ভিত। সেই বাংলাকে ফেরানোর চেষ্টায় নেমেছেন এক পরিচিত পরিচালকের মেয়ে— যাঁর শিরায় শিরায় বইছে বাংলার বাণিজ্যিক ছবির রক্ত।

একটা সময় ছিল যখন মফস্‌সলের সিনেমা হলে দর্শকদের লাইন পড়ত অঞ্জন চৌধুরীর ছবি দেখতে। “আব্বাজান”, “মায়ের আঁচল” কিংবা “চোখের বালি”-র মতো ছবি শুধু গল্পে নয়, আবেগে জিতত। আজকের দিনে সেই ধরনের গল্প দেখা মেলে না বলেই হতাশ অনেকেই। কিন্তু সেই খামতি পূরণে এগিয়ে এসেছেন রিনা চৌধুরী। বাবার দেখানো পথেই হাঁটতে চান তিনি। বাংলার মাটির গন্ধ, ঘরানার আবেগ, মফস্‌সলের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ছবি বানানোর লক্ষ্য নিয়ে ফিরছেন পরিচালনার জগতে।

বহুদিন পরে পরিচালনায় ফিরছেন অঞ্জন চৌধুরীর ছোট মেয়ে রিনা। তাঁর নতুন ছবি ‘সোহাগ রাত’ নিয়ে ইতিমধ্যেই টলিউডে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। ছবির নায়ক তরুণকুমারের নাতি সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপরীতে রয়েছেন ছোট পর্দার পরিচিত মুখ রিয়া। রয়েছেন উত্তমকুমারের নাতনি নবনীতা চট্টোপাধ্যায়ও। আর এই ছবিটিই আদতে অঞ্জন চৌধুরীর কালজয়ী ছবি ‘আব্বাজান’-এর সিক্যুয়েল। সেখানে ছিল এক মুসলিম বাবা আর হিন্দু ছেলের সম্পর্কের গল্প, এখানে থাকবে এক মুসলিম মা আর হিন্দু ছেলের ভালোবাসা। এক যুগান্তকারী বার্তা দিতে চান রিনা, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মানবিকতার গল্প বলাই তাঁর মূল লক্ষ্য।

ছবির কাস্টিং নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই অকপট রিনা, “তারকাখচিত ছবিও তো এখন হল ফাঁকা! দর্শক আজ পরিচালকের বা প্রযোজকের বিশ্বাসযোগ্যতা দেখে ছবি দেখতে যান। তা হলে কেন অকারণে তারকাদের পারিশ্রমিকে প্রযোজকের পয়সা নষ্ট করব?” জানিয়েছেন, তাঁর প্রযোজক ছোট পরিসরের মানুষ। তাই বাজেট বুঝে অভিনয় ক্ষমতা অনুযায়ী শিল্পী বেছে নিয়েছেন তিনি। এমনকি নিজের দিদি চুমকি চৌধুরীকেও নিতে পারেননি, কারণ তিনি তখন ধারাবাহিকে ব্যস্ত।

আরও পড়ুনঃ ২১-তেই বিয়ের সিদ্ধান্ত! বয়সে বড় প্রেমিকের জন্যই কি তড়িঘড়ি ছাঁদনাতলায় অভিনেত্রী অনন্যা কুন্ডু?

মাত্র ১৫ দিনে ‘সোহাগ রাত’-এর শ্যুটিং শেষ করে ফেলেছেন রিনা। যদিও আফসোস করেছেন, বাবার সময় মাসখানেক ধরে চলে শ্যুটিং। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য প্রযোজক লাভ-ক্ষতির হিসাব মাথায় রেখে তবেই কাজ করতে দেন। ছবিটি মুক্তির ক্ষেত্রে তিনি কলকাতার কিছু হলে ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। রিনার মতে, “বাবার ছবির আসল রসদ ছিল মাটির মানুষদের জন্য গল্প বলা। আমি সেই দর্শকদের জন্যই ছবি বানিয়েছি।” ভবিষ্যতে কি তিনি অঞ্জনের মতোই ঘরানার ছবি করতেন থাকবেন? হাসিমুখে উত্তর দেন, “কেন নয়? কার মতো বানাচ্ছি সেটা বড় কথা নয়, সফল ছবি বানাচ্ছি কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ।”