নাট্যমঞ্চ থেকেই যাত্রা শুরু তাঁর। ছোটবেলায় বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় পা রাখা এই অভিনেত্রীর প্রথম ঠিকানা ছিল বালিগঞ্জে কাকার বাড়ি। তবে সেখান থেকে চলে যেতে হয় মধ্যপ্রদেশে, মা-বাবার সঙ্গে। তবু শহর কলকাতার সঙ্গে তাঁর টান কখনও কমেনি। ছুটি পেলেই ফিরে আসতেন প্রিয় শহরে। একদিন দিদির সঙ্গে নাটক দেখতে গিয়েই অভিনয়ের প্রথম হাতেখড়ি। সেই শুরু, আর থেমে থাকেননি। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে বর্ষিয়ান অভিনেত্রী ‘লিলি চক্রবর্তী’ (Lily Chakravarty) কে নিয়ে। প্রথম বড় সুযোগ পেয়েছিলেন ‘ভানু পেল লটারি’ ছবিতে।
এরপর একে একে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায় থেকে শুরু করে প্রসেনজিৎ, দেব, প্রজন্মের পর প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। লিলি চক্রবর্তীর অভিনয় জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর কাজ। ‘বিপাশা’ ছবিতে প্রথমবার মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। উত্তম কুমারের সৌজন্যতা, সহ-অভিনেতার সঙ্গে সহজ মেলামেশার অভিজ্ঞতা আজও তাঁর স্মৃতিতে গেঁথে আছে। মহানায়ক ছিলেন বন্ধুবৎসল, সবার সঙ্গে মিশতেন, কাউকে ছোট করতেন না।
তবে একেবারে বিপরীত অভিজ্ঞতা ছিল মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে। সুচিত্রার স্বভাব, সংরক্ষিত আচরণ, এই অভিনেত্রীর মনে গভীর দাগ কেটেছিল। তিনি বলেন,”একটি মাত্র ছবিতেই কাজ করেছিলাম মহানায়িকা সঙ্গে। তারপরেই বুঝে গিয়েছিলাম উনি কেমন! রাশভারী বললে ভুল হবে, বরং নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখতেন। লোক বেছে বেছে কথা বলতেন।” তিনি অকপটে বলেন, সুচিত্রা সেনের সঙ্গে প্রথম কাজই ছিল এবং শেষ কাজ! তাঁর মতে, সুচিত্রার শুধু নির্বাচিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টা লিলির একদম পছন্দ ছিল না।।
এমনকি পরে একসঙ্গে একাধিক ছবির অফার থেকেও তিনি তাঁকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন মহানায়িকা, বলে লিলি জানান। অভিনেত্রীর দাবি, সুচিত্রার অভিনয় ছিল পরিকল্পিত, অনেকটা মুখ বেঁকিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে, যেখানে তাঁর নিজের অভিনয় ছিল অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত, সহজ। এই পার্থক্যই হয়তো অস্বস্তি তৈরি করেছিল সুচিত্রার মনে। তাঁর কথায়,”উনার অসুবিধা হচ্ছিল আমার সঙ্গে অভিনয় করতে। আসলে উনি খুব ঘাড় বেকিয়ে মুখ বেকিয়ে অভিনয় করতেন।
আরও পড়ুনঃ বড় পর্দার শ্রীচৈতন্যকে ছোট পর্দা শ্রীচৈতন্যর আশীর্বাদ! ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে দিব্যজ্যোতির আত্মনিবেদন! সহ-অভিনেতা যিশুর স্মৃতিতে ফিরল পুরনো দিন!
আর আমি স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক অভিনয় করতাম। সেটাই পাছে তাঁর অভিনয়কে চাপা দিয়ে দেয়, সেই ভয়তে হয়তো এসব করেছেন।” তবে শুধু তাঁর সঙ্গেই নয়, সেই সময় আরও অনেক নবীন ও প্রতিভাবান অভিনেতাদের প্রতিও এই ব্যবহারের নিদর্শন আছে বলে দাবি করেন তিনি। নামজাদা তারকারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য সহ-অভিনেতাদের চেপে রাখার চেষ্টা করতেন বলেও অভিযোগ তাঁর। তবু সব কিছু পাশ কাটিয়ে এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী নিজের জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন বহু সিনেমায়, বহু চরিত্রে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।