অভিনয় জগতে বরাবর নিজের প্রতিভায় সুনাম কুড়িয়েছেন অভিনেতা ‘রণজয় বিষ্ণু’ (Ranojoy Bishnu)। স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গুড্ডি’-র অনুজ চরিত্রের হাত ধরে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে। এখন তাঁকে দেখা যাচ্ছে জি বাংলার ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’তে ‘অনিকেত’ চরিত্রে, যেখানে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করছেন শ্বেতা ভট্টাচার্য ওরফে ‘শ্যামলী’। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে যতটা সংবেদনশীল আর পরিণত মনে হয়, বাস্তব জীবনেও তার থেকে খুব একটা কম নন তিনি।
আসলে ক্যামেরার পিছনে রণজয় একদমই আলাদা একজন মানুষ। অভিনয় জগতে ব্যস্ত থাকার মাঝেও তিনি নিজের শৈশবের অভ্যাস ভুলে যাননি। রং, তুলি আর ক্যানভাস এখনও তাঁর আপন ভুবন। অনেকদিন কাজের চাপে সে জায়গা থেকে দূরে থাকলেও ছুটির দিনে বা কাজের ফাঁকে তিনি নিজের ভালো লাগার দিকগুলোর কাছে ফিরে যান। তাছাড়াও তার পরিণত ব্যক্তিত্বের পিছনে রয়েছে শৈশবের অভিজ্ঞতা, রণজয়ের জীবনের সব থেকে বড় প্রভাব তাঁর শৈশব!
অতীতে একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছোটবেলা কেটেছে অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে। জন্মদিনে কেক কাটা তো দূরের কথা, বছরে এক-দু’বার মাংস খাওয়া ছিল তাদের পরিবারের বিলাসিতা। সেই সময়ে বন্ধুদের কাছ থেকেও বিশেষ গুরুত্ব পেতেন না। এই অভিজ্ঞতা গুলোই তাঁকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে, দিয়েছে বাস্তবের শিক্ষা। এত কিছুর মধ্যেও তিনি থেমে থাকেননি, নিজের অবস্থান থেকে সমাজের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি!
সম্প্রতি এক অ্যাওয়ার্ড শোতে রণজয় জানিয়েছেন তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য কী। তাঁর কথায়, “আমার ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে সমাজে দুস্থদের জন্য একটা বৃদ্ধাশ্রম করব। আর এর সঙ্গেই যেসব নতুন প্রজন্ম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে বা বিপথে চলে গেছে, তাদের জন্য আলাদা করে একটা এডুকেশন সিস্টেম তৈরি করা। আমি লক্ষ্য করেছি এদের কাছে পড়াশোনার থেকে খাবারের মূল্য অনেক বেশি। আসলে পেটের খিদে বড় খিদে, তারপর পুঁথিগত যোগ্যতা।
আরও পড়ুনঃ “গুড টাচ-ব্যাড টাচ শেখালে যৌ’ন হেন’স্থাই বাড়ে!” “সন্তানকে আদর করতেও বাবাকে অনুমতি নিতে হচ্ছে!”— পাশ্চাত্য শিক্ষা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ মমতা শঙ্করের! ভারতীয় সংস্কৃতির বিপরীত শিক্ষাই কি শিশুদের শৈশব নষ্ট করছে? শিশুদের ‘নিরাপত্তা শিক্ষা’ নাকি ‘ভয় শিক্ষা’?— প্রশ্ন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত শিল্পীর!
সেই সব কিছুকে মাথায় রেখে নতুনভাবে কিছু একটা করতে চাই, কারণ শুধু পড়াশোনা দিয়ে তাদের মূল স্রোতে আনার চেষ্টা করেছি সফল হয়নি।” এই কথাগুলোর মধ্যেই যেন ধরা পড়েছে একজন অভিনেতার আসল সত্তা এবং দায়িত্ববোধ! একজন মানবিক, সমাজসচেতন এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ রণজয় বিষ্ণু। যিনি শুধু নিজের কেরিয়ার নয়, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে আলোর পথে নিয়ে যেতে চান।