বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে শিশুদের প্রতি যৌ’ন হেন’স্থার ঘটনা (Molestation) ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। সমাজে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা সামনে আসছে, যেখানে নির্যা’তনের শিকার হচ্ছে নাবালিকা থেকে শুরু করে কিশোররাও। বিষয়টা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং বয়স যত কম, ঝুঁকি যেন তত বেশি। এক-দু’মাসের শিশুকন্যা থেকে বছর ছয়ের বালক—নির্বিচারে আক্রান্ত হচ্ছে এই নির্মল বয়সের শিশুরাও।
ফলে শিশুদের এই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা সম্পর্কে ছোট থেকেই সচেতন করে তোলার প্রয়াসে ‘গুড টাচ-ব্যাড টাচ’ (Good Touch-Bad Touch) শিক্ষা আজকাল আন্তর্জাতিক স্তরেই স্বীকৃত ও জরুরি এক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে। শিশুদের শরীর নিয়ে সচেতনতা তৈরির এই পাঠ তাদের শেখায় কোন ছোঁয়া ভালোবাসার, আর কোনটা বিপদের সংকেত। আজকাল এই শিক্ষা শুধু শহুরে বা উচ্চবিত্ত পরিবারে সীমাবদ্ধ নেই, স্কুল, সমাজ ও পরিবার মিলেই শিশুদের এই জ্ঞান দিচ্ছে।
মূলত শিশুদের নিজেদের শরীরের সীমানা বোঝাতে এবং কারও অস্বস্তিকর আচরণ চিহ্নিত করে আত্মরক্ষা করতে শেখাতে, এই শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই তৈরি হয়েছে এক নতুন বিতর্ক, যা ঘিরে সরগরম সামাজিক পরিসর। এই প্রসঙ্গেই নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ও পদ্মশ্রী প্রাপ্ত অভিনেত্রী ‘মমতা শঙ্কর’ (Mamata Shankar)। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘গুড টাচ-ব্যাড টাচ’ আসলে পাশ্চাত্য থেকে আগত শিক্ষা, যা আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃত করছে।
তাঁর মতে, শিশুদের প্রতি স্বাভাবিক আদর-যত্ন নিয়েও এখন সমাজে একটা আতঙ্ক কাজ করছে। পরিবারে শিশুকে কোলে তুলে আদর করলেও, কেউ কেউ ভয় পান শিশুটি পরে ‘ব্যাড টাচ’ বলবে কিনা! এভাবেই নাকি শিশুর শৈশব থেকে আদর-ভালবাসার জায়গাটা কেমন অস্বস্তিতে ঢেকে যাচ্ছে বলে মত তাঁর। মমতা শঙ্করের বক্তব্যে আরও উঠে আসে, শিশুকে নির্দ্বিধায় আদর করা কিংবা ভালোবাসা প্রকাশ করাও যদি আজ প্রশ্নের মুখে পড়ে, তাহলে সেটাই সমাজের জন্য বিপদ সংকেত।
তাঁর মতে, এই ধরনের শিক্ষার ফলে শিশুরা না বুঝেই কোনও ছোঁয়াকে খারাপ হিসেবে ভাবতে শিখছে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে বলেই আশঙ্কা তাঁর। শুধু তাই নয়, ছোট থেকেই শিশুদের “ভালো ছোঁয়া বনাম খারাপ ছোঁয়া” এই বিভাজনের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের মনোযোগ টেনে আনা হচ্ছে সেই ‘খারাপ’-এর দিকে, যেটা ভবিষ্যতে আরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই বক্তব্য সামনে আসতেই সমাজে তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
আরও পড়ুনঃ শেষ দেখা আর হল না… হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তাপস, ভেতরে নি’থর মহুয়া! শেষে মহুয়ার পাশে ছিল না কেউ, শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন অভিনেতা! জুটিতে পর্দা কাঁপিয়েছিলেন, তাকেই শেষবার দেখার অনুমতিও দেওয়া হয়নি! কিন্তু কেন ?
একাংশ মমতা শঙ্করের বক্তব্যকে সাহসী বলে স্বীকৃতি দিলেও, বৃহৎ অংশ এই ধরণের মতকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুদের এই শিক্ষা দেওয়া ভীষণ প্রয়োজনীয়। মমতা শঙ্করের মন্তব্য একরকম বিপজ্জনক ভুল বার্তা দিচ্ছে বলেও মত অনেকের। শিশুদের নিরাপত্তা আর শৈশবের স্বাভাবিকতা—এই দুইয়ের ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াটাই এখন সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশিষ্ট শিল্প হিসেবে, তার অভিমত কেও ফেলে দেওয়া যায় না!
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।