বর্ষীয়ান অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়ের (Basanti Chatterjee) জীবন যেন ছিল সংগ্রাম আর যন্ত্রনার দীর্ঘ কাহিনি। জীবনের শেষ ছ’মাস শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি, এমনকি বিছানা ছেড়ে ওঠার শক্তিও ছিল না। ক্যা’ন্সার, কিডনির সমস্যা আর নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে ক্রমশ অবসন্ন করে তুলেছিল। চিকিৎসার খরচ বহন করাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল বড় চ্যালেঞ্জ। মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা ওষুধে, সাড়ে চার হাজার টাকা ইনজেকশনে খরচ হত, অথচ কাজ করতে পারছিলেন না। দমদম পার্কের বাড়িতে এক গৃহসহায়িকার সঙ্গে একাই থাকতেন তিনি, সন্তান থাকতেন অন্য জায়গায়।
এমন পরিস্থিতিতেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিনয়ের প্রতি টান ছাড়েননি বাসন্তীদেবী। টেলিপাড়ায় তাঁর চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নেমে আসে শোকের ছায়া। সহ-অভিনেতা ‘ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়’ (Bhaswar Chatterjee) সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ধারাবাহিক গীতা এলএলবি-তে বাসন্তীদেবী তাঁর মা’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, আর সেই সূত্রেই তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল এক গভীর আত্মিক সম্পর্ক। ভাস্বরের মতে, এই মৃত্যু যেন বাস্তবেই মাতৃবিয়োগের বেদনা নিয়ে এলো। কয়েকদিন আগেই নিলাদ্রি লাহিড়ীর প্রয়াণে ব্যথিত ছিলেন তিনি, এবার প্রিয় ‘মা’কেও হারালেন।
ভাস্বর আরও জানান, বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অসীম কষ্ট সহ্য করেছেন। শরীর সঙ্গ না দিলেও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই তিনি হয়ে উঠতেন একেবারে অন্য মানুষ—দাপুটে, প্রাণবন্ত। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি শ্যুটিং চালিয়ে যেতেন, কারণ অভিনয় ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বিশেষ করে গীতা এলএলবি ধারাবাহিক তাঁকে এমন এক চরিত্রে দেখার সুযোগ দিয়েছিল, যা বড়পর্দায় কখনও আসেনি। এই চরিত্রই তাঁকে জীবনের শেষ ভাগে এক আলাদা আনন্দ এনে দিয়েছিল। বাসন্তীদেবীর দীর্ঘ জীবনের কাহিনি সহকর্মীরা কাছ থেকে দেখেছেন।
ভাস্বরের ভাষায়, তিনি শুধু এক অভিনেত্রী নন, ছিলেন এক যোদ্ধা। তাঁর জীবনসংগ্রামের সাক্ষী হয়ে বারবার সমাজ মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। ভাস্বর সংবাদ মাধ্যমকে নিজের অনুভব প্রকাশ করার পর, সামাজিক মাধ্যমেও একটি লেখা প্রকাশ করেন। ভাস্বরের কথায়, “ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে কতগুলো নম্বর যে ডিলিট হয়ে গেল এই কয়েক দিনে। কদিন আগে নীলাদ্রি লাহিড়ী আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, এবার আমার ‘মা’ বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়ও ওপারে চলে গেলেন সব মায়া কাটিয়ে। এক প্রকার বেঁচে গেছেন উনি।
আরও পড়ুনঃ যাদবপুরের ছাত্র ‘র্যা’গিং’, অকালেই ঝরে যায় স্বপ্নদীপ কুণ্ডু’র প্রা’ণ! ম’র্মান্তিক সেই ঘটনা এবার বড়পর্দায় আনছেন রাজ চক্রবর্তী! স্বাধীনতা দিবসেই ঘোষনা! এক ঝাঁক নতুন মুখ সহ কারা থাকছেন এই ছবিতে?
অসীম কষ্ট আর সংঘর্ষের হাত থেকে মুক্তি পেলেন অবশেষে। স্বচক্ষে দেখা শারিরীক অসুস্থতা সত্বেও উনি শ্যুটিং করতে আসতেন। যতই ঝুড় আসুক জীবনে, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই উনি অন্য মানুষ। কি দাপুটে অভিনয়! যারা সত্যি বাসন্তী দেবীকে ভালবাসেন এবং মৃত্যুতে কষ্ট পাচ্ছেন, তারা দয়া করে একবার ওনার জীবনীটা পড়ুন! বইটির নাম ‘বাসন্তী রঙে আঁকা’। আশা করি অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং অভিভূত হবেন লেখাটা পড়ে।” সহকর্মী ও অনুরাগীদের কাছে তিনি ছিলেন অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ। তাঁর মৃত্যু তাই শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, শিল্পীসমাজেরও বড় শূন্যতা।