বাংলার বুকে হিন্দু গণহ’ত্যা হয়েছে! মেনে নিলেন একদা তৃণমূলী ‘বেঙ্গল ফাইলস’-এর গোপাল পাঠা সৌরভ দাস! সিনেমার ট্রেলারে ‘হিন্দু গণহ’ত্যা’র বার্তা! সত্যি বলতেই মুখ ফিরিয়েছে দল?

বিবেক অগ্নিহোত্রীর (Vivek Agnihotri) নতুন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files) ঘিরে ইতিমধ্যেই জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে। ১৯৪৬ সালের ভয়ঙ্কর “ডিরে’ক্ট অ্যাক’শন ডে”-র (Direct Action Day) প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিতে অবিভক্ত বাংলার সাম্প্র’দায়িক দা’ঙ্গা, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচারের কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। হাওড়া ব্রিজ থেকে শুরু করে গঙ্গার ধারে পড়ন্ত বিকেলের ফ্রেমে দেশভাগের বিভীষিকা তুলে ধরেছেন তিনি। অনুপম খের, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও পল্লবী যোশির মতো অভিনেতাদের পাশাপাশি, ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘সৌরভ দাস’ (Saurav Das)। গোপাল পাঠার ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে।

আর এই ভূমিকাই আবারও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে তাঁকে। সৌরভ দাস এই ছবির ট্রেলার নিজের সমাজ মাধ্যমের পাতায় শেয়ার করে লিখেছেন, “হিন্দু গ’ণহ’ত্যার অজানা কাহিনি নিয়ে তৈরি সবচেয়ে সাহসী ছবিটি আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে।” জন্মাষ্টমীর দিন, অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের পরদিন মুক্তি পাওয়া ট্রেলারে সাম্প্রদায়িক হিং’সার নৃ’শং’স দৃশ্য দর্শকদের কাঁপিয়ে তুলেছে। পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী দাবি করেছেন, কলকাতায় ছবির ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠান রাজনৈতিক চাপের কারণে বাতিল করতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “সত্যজিৎ রায়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতির হবে ভাবিনি।”

ফলে ছবিটি মুক্তির আগেই একপ্রকার রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে। অভিনেতা সৌরভ দাসের রাজনীতির সঙ্গে যোগও নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে তিনি প্রকাশ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে তাঁকে আর শাসকদলের প্রচারে দেখা যায়নি। যদিও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে তারকা প্রচারকের তালিকায় রাখা হয়েছিল। এবার দ্য বেঙ্গল ফাইলস-এ তাঁর উপস্থিতি ঘিরেই আবার প্রশ্ন উঠছে—তিনি এখনও কি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত আছেন, নাকি সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়েছে?

তৃণমূল শিবিরের একাংশের দাবি, সৌরভ দাসের সঙ্গে এখন আর কোনও যোগ নেই দলের। তবে রাজনৈতিক যোগ বা বিচ্ছেদ নিয়ে নিজের অবস্থান একেবারেই স্পষ্ট করেছেন সৌরভ। তাঁর কথায়, কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নয়, বরং ধর্মের নামে হিংসা এবং অরাজকতার প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি এই চরিত্র বেছে নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, আগেও ‘খাকি দা বেঙ্গল চ্যাপ্টার’এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি ততটা গুরুত্ববহ না হওয়ায় রাজি হননি। গোপাল পাঠার চরিত্রে তাঁর মতে অনেক বেশি গভীরতা এবং অভিনয় করার মতো সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ‘বলি ও ননদী আর দু মুঠো চাল…’— সেই কণ্ঠ আজ নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ! বাংলা লোকসঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ নাম ‘স্বপ্না চক্রবর্তী’ আজ আঁধারে! একসময় যাঁর সুনাম ছিল সর্বত্র, আজ কেউ খোঁজ নেয় না! জেলাশাসকের কাছেও পেয়েছেন অবহেলা, এখন দিন কাটান অভাব আর রেশনের চালে!

তাই এই চরিত্রটিকে স্মরণীয় করে রাখার ইচ্ছেই তাঁকে ছবির সঙ্গে যুক্ত করেছে। তবে রাজনৈতিক মহলে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, দ্য বেঙ্গল ফাইলস-এর মতো বিতর্কিত ছবিতে অভিনয় করার কারণেই কি তাঁকে আস্তে আস্তে শাসকদল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হল? বিশেষ করে ছবির বার্তা, বাংলাকে “দ্বিতীয় কাশ্মীর” হিসেবে তুলে ধরা এবং বিভাজনের আবহ উসকে দেওয়ার অভিযোগে বিতর্ক আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে সৌরভ দাস এখন যেমন অভিনয়ের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, তেমনি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়বে বলেই অনুমান।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।