বিনোদন জগতে সমকালীন এক তুমুল আলোচিত ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files) ছবির মুক্তির আগেই একাধিক বিতর্ক ঘিরে ফেলেছে এটিকে। অভিযোগ উঠেছে, ইতিহাস বিকৃত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করছে পরিচালক ও প্রযোজক সংস্থা। বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন, ১৯৪৬ সালের দা’ঙ্গা এবং গোপাল মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের জন্য ইতিমধ্যেই একাধিক এফআইআর দায়ের হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই ছবির অন্যতম মুখ্য অভিনেতা ‘শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়’ (Saswata Chatterjee) সামনে এসে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
তবে তাঁর বক্তব্য অনেকের কাছেই দায়িত্ব এড়ানোর অজুহাতের মতো মনে হয়েছে। শাশ্বতের দাবি, তিনি একজন অভিনেতা, ইতিহাসবিদ নন। তাই ছবিতে কতটা সত্যি আর কতটা বিকৃতি, সেটা তাঁর দেখার দায়িত্ব নয়। তিনি কেবল নিজের চরিত্রকে আকর্ষণীয় মনে করে অভিনয় করেছেন। সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের যুক্তি যথেষ্ট সরলীকৃত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। কারণ একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা যখন বিতর্কিত বা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল ছবিতে অভিনয় করেন, তখন তাঁরও নৈতিক দায় থাকে। কেবল ‘আমি চরিত্র বেছে নিয়েছি’ বলে দায় ঝেড়ে ফেলা কি সত্যিই গ্রহণযোগ্য?
আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে ছবির নাম পরিবর্তন ঘিরে। শাশ্বতের কথায়, যখন তিনি শুটিং করেছিলেন তখন ছবির নাম ছিল ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’। পরে হঠাৎ করেই তা হয়ে যায় ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। অথচ এর পেছনের কারণ তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন। সমালোচক মহলের বক্তব্য, এত বড় একটি ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার পরও ছবির মূল দিক নিয়ে অজ্ঞ থাকার দাবি অবিশ্বাস্য। একজন অভিজ্ঞ শিল্পী হিসেবে শাশ্বতের কাছে এমন অস্পষ্ট অবস্থান কেউ আশা করেননি। ওনার মতো একজন অভিজ্ঞ ও বহুমুখী অভিনেতার কাছে দর্শকদের প্রত্যাশা সবসময়ই আলাদা।
তাই তাঁকে ঘিরে বিতর্কে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— কীভাবে তিনি চরিত্র সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধান না করেই এত বড় একটি ছবিতে সম্মতি দিলেন! বিশেষত যখন ছবিটি বাংলার ইতিহাস ও সংবেদনশীল অধ্যায়কে ঘিরে নির্মিত হচ্ছে, তখন তাঁর বোঝা উচিত ছিল যে এটি শুধুমাত্র একটি চরিত্র নয়, বরং গোটা রাজ্যের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব। অথচ আজ, ছবি নিয়ে সমালোচনা বাড়তেই তিনি সহজভাবে দায় এড়িয়ে বলছেন, তিনি কেবল অভিনেতা, ইতিহাসবিদ নন। অনেকেই মনে করছেন, এ আসলে পিঠ বাঁচানোর কৌশল, যা একজন সচেতন শিল্পীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
এই পুরো বিতর্কে শাশ্বত বরং দায়িত্বশীল অবস্থান না নিয়ে নিজেকে আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তাঁর বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে, “আদালত সিদ্ধান্ত নিক”, “অভিনেতার কাজ শুধু অভিনয় করা” ইত্যাদি মন্তব্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যখন ছবিটি সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে, তখন অভিনেতারা কি কেবল নিজেদের চরিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন? একজন শিল্পী যদি কেবল স্ক্রিপ্ট মেনে চলেন, তবে কি তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই? শাশ্বতের মতো জনপ্রিয় ও অভিজ্ঞ অভিনেতার কাছ থেকে তাই দর্শকরা আরও সৎ এবং সাহসী অবস্থান প্রত্যাশা করেছিলেন। সব মিলিয়ে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ যেমন রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক বিতর্কে জর্জরিত।
আরও পড়ুনঃ “ইচ্ছা ছিল জীবনের শেষ দিনটাও অভিনয় করে কাটাব, আমি তো এখনও অভিনয় করতে চাই, কিন্তু কেউ ডাকেই না” – কেন পর্দা থেকে হারিয়ে গেলেন অভিনেত্রী দেবিকা মিত্র? হতাশা, আক্ষেপ গ্রাস করেছে তাকে!
তেমনই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তিনি ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা নিঃসন্দেহে তাঁর কেরিয়ারের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি সুযোগ। কিন্তু ছবির ঐতিহাসিক সত্য বিকৃতি এবং নাম পরিবর্তনের মতো গুরুতর ইস্যুগুলিতে তিনি একেবারেই নির্লিপ্ত থেকেছেন। তাঁর বক্তব্য অনেকটা ‘অভিনয় করলেই দায়িত্ব শেষ’ ধরনের, যা একজন অভিনেতার শিল্প-সচেতনতা ও নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। দর্শকেরা হয়তো ছবির মুক্তির পর চূড়ান্ত রায় দেবেন, তবে আপাতত শাশ্বতের নীরবতা এবং দায় এড়ানোর ভঙ্গিই সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।