চলচ্চিত্র জগতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন আসন্ন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ (The Bengal Files)। মুক্তির আগেই ছবির পরিচালক ‘অগ্নিহোত্রী’কে (Vivek Agnihotri) ঘিরে তৈরি হয়েছে আইনি জটিলতা। গোপাল মুখোপাধ্যায় তথা ‘গোপাল পাঁঠা’র (Gopal Mukherjee) চরিত্রায়ন নিয়ে তাঁর পরিবার অভিযোগ এনেছে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের। নাতি শান্তনু মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ছবিতে তাঁর ঠাকুরদাকে ভুলভাবে ‘ক’সাই’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অথচ তিনি ছিলেন অনুশীলন সমিতির এক সক্রিয় সদস্য এবং কুস্তিগীর। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-এ মুসলিম লিগের দা’ঙ্গার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন গোপাল।
বউবাজারের মলঙ্গা লেন থেকে তাঁর নেতৃত্বেই সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। অনুগামীদের উদ্দেশে নির্দেশ দেন, “লিগ দাঙ্গাকারী একজনকে মা’রলে দশ জনকে মা’রবে। কিন্তু নিরীহ মুসলিম নারী-পুরুষ বা বৃদ্ধদের কোনও ক্ষতি করা যাবে না।” শান্তনু ইতিমধ্যেই আইনি নোটিশ পাঠিয়ে পরিচালককে ক্ষমা চাইতে বলেছেন এবং ভুল চরিত্রায়ন সংশোধনের দাবি তুলেছেন। এই বিতর্কের মধ্যেই নতুন মাত্রা যোগ করেছেন টলিউড অভিনেতা ‘ঋত্বিক চক্রবর্তী’ (Ritwick Chakraborty)। অভিনেতা এমন একটি পোস্ট করলেন, যার জেরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক এবং কটাক্ষের ঝড়। উল্লেখ্য, অভিনেতা প্রায়শই এমন পোষ্ট করেই থাকেন, যার জন্য তাঁকে নিয়ে কম চর্চাও হয় না।
এদিন তিনি পোস্ট করলেন, “তুমি কি সিনেমা দেখে ইতিহাস শিখছো? তাহলে এবার ইউটিউব দেখে সাঁতার আর রেডিও শুনে পেন্টোমাইম শিখে নাও ভাই, অকাল কুষ্মাণ্ড!” এর থেকে স্পষ্ট যে, অভিনেতা ‘ডিরেক্ট একশন ডে’ এবং মুসলিম লীগ দ্বারা হিন্দুদের নি’র্মম হ’ত্যা’লীলা নিয়ে তৈরি ছবিটিকেই ইঙ্গিত করছেন। এরপরেই কার্যত সমাজ মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানান সমালোচনা। কেউ বলেছেন, “কেউ সিনেমা দেখে ইতিহাস শেখে না, সিনেমাকে জনগণ সিনেমার মতোই নিতে চায়। একটা ট্রেলারেই বাংলা সিনেমার আর্টিস্টদের সব ভয় শুরু হয়ে গেছে!”
আবার কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন, “বলছি ঋত্বিক দা, আমি আপনার কিছু সিনেমা দেখেছি, বেশ ভালোই লেগেছে।। আপনার মতো অত বিজ্ঞ নয় এই সিনেমার ব্যাপারে। বলছি দাদা আপনার কোথায় কোথায় সিনেমা টা নিয়ে সমস্যা একটু উল্লেখ করলে ভালো হয় আমার মতো অজ্ঞ দের বেশ বুঝতে সুবিধা হতো। ইদানিং তো আপনাকে বেশ কিছু নিয়ে কথা বলতে দেখেছি। কিন্তু ‘আর জি কর’ কান্ড, ‘কসবা’র ঘটনা বা মুর্শিদাবাদের সময় আপনার থেকে এই ধরণের কিছু কথা বা বক্তব্য এখনো কিছু পেলাম না। আপনার মতন গুণী মানুষদের দিকেই তো আমরা সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকি।”
কটাক্ষ করে কেউ বলেছেন, “সিনেমা করলেই কেউ বিশাল শিক্ষিত হয়ে যায় না, আপনিই তার পরিচয়! সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হলে, অবশ্যই সিনেমা দেখেও ইতিহাস শেখা যাবে! সিনেমা বুঝিনা, তবে ‘ডাইরেক্ট একশন ডে’কে যারা হিন্দু হয়ে মানেনা, প্রোপাগান্ডা ভাবে তাদের মাথার চিকিৎসা দরকার।” অন্য একজনের মতে, “শুধু একটা প্রশ্ন ছিল দাদা। বাঙালি হিন্দুরা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলো কেন? এইটার ওপর যদি এতা সিনেমা বানান, মানে লিড রোল আপনি করবেন। ইতিহাস শেখা যায় শুধুমাত্র আপনার আঁতলামিতেই! আজব হিপোক্রেট লোকজন মাইরি!
আরও পড়ুনঃ “প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে সেলিব্রেটি বলা যায়! দেব- জিৎ সেলিব্রেটি নয়, দিন শেষে একা ছবিকে টানার ক্ষমতা নেই!” কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে শুরু তুমুল বিতর্ক নেটপাড়ায়
এমনভাবে বলছেন যেন ক্যালকাটা রায়ট ১৯৪৬ হয়নি?” সমালোচকদের মতে, ঋত্বিক হালকা ধরণের কৌতুক করে গুরুতর ঐতিহাসিক ঘটনাকে ছোট করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষত, ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’-এর মতো সংবেদনশীল প্রসঙ্গে এই ধরনের মন্তব্য নেটিজেনদের বড় অংশের কাছে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেই মনে হয়েছে। হঠাৎ করে এই ছবিকে কেন্দ্র করে ঋত্বিকের কটাক্ষ হয়তো রাজনৈতিক দাপটের প্রতিফলন। একদিকে বিকৃতির অভিযোগ, অন্যদিকে ঋত্বিকের কটাক্ষ ছবির গুরুত্বকে হেয় করছে বলে মত জনতার। দায়িত্বশীল শিল্পীর কাছে এটা অপ্রত্যাশিত এবং তাঁর নিজের ভাবমূর্তিকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।