টলিউডের পর্দায় কিছু মুখ এমন থাকে যাদের অভিনয় শুধু দর্শকের চোখেই নয়, মনের গভীরেও ছাপ ফেলে যায়। সেই তালিকায় নিঃসন্দেহে অন্যতম নাম জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬২ বছর বয়সে তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে হারাল বাংলা সিনেমা এক সময়ের জনপ্রিয় নায়ককে। কিছুদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সোমবার হাসপাতালে জীবনাবসান হয় এই অভিনেতার।
তার জন্ম হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ১৯৮২ সালে পরিচালক বিদেশ সরকারের ছবি অপরূপা-য় দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিষেক করেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম ছবিতেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। এরপর একে একে ‘অভাগিনী’, ‘হীরক জয়ন্তী’ সহ একাধিক ছবিতে চুমকি চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেন। সেই সময়েই টলিপাড়ায় তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। জয় নিজেও একসময় মেনে নিয়েছিলেন প্রণয়ের কথা, যদিও শেষ পর্যন্ত সে সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। তবু এই সিনেমাগুলিই তাঁকে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।
জয়ের অভিনয়জীবনের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায় ছিল ‘মিলন তিথি’, ‘সিঁথির সিঁদুর’ ও ‘ছোট সাহেব’-এর মতো ছবি। বাংলা ছবির বাজারে তখন বাণিজ্যিক ছবির দাপট, আর সেখানেই নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন তিনি। নায়কোচিত গাম্ভীর্য আর আবেগঘন অভিনয়— দু’টোই ছিল তাঁর ভঙ্গিমায়। টলিউডের দর্শক তাঁকে একসময় সমানভাবে রোমান্টিক হিরো ও পারিবারিক গল্পের নায়ক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
পর্দার বাইরে তাঁর জীবনও ছিল সিনেমার মতোই ওঠানামায় ভরা। টলিউড অভিনেত্রী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন জয়। কিন্তু দাম্পত্য টেকেনি, শেষমেশ বিচ্ছেদ ঘটে। অনন্যা পরে রাজনীতির মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙন জয়কে কিছুটা আড়ালে নিয়ে গেলেও অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে ভোলাতে পারেনি।
দীর্ঘদিন পর্দা থেকে দূরে থাকার পর ২০১৪ সালে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি— এবার রাজনীতির ময়দানে। বিজেপির প্রার্থী হয়ে শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন লোকসভা ভোটে। যদিও সাফল্য আসেনি। ২০১৯-এ আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু ফলাফল একই থেকে যায়। শেষমেশ ২০২২ সালে তিনি বিজেপি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনঃ চিকিৎসকের গাফিলতিতে সদ্যজাত পুত্রসন্তান হা’রিয়ে শো’কে স্তব্ধ অভিনেত্রী-ইনফ্লুয়েন্সার সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়! সন্তান আসার খুশি ভাগ করেছিলেন সবার সঙ্গে, অথচ মুহূর্তেই মাতৃত্বের আনন্দ গ্রাস করল শো’কের কালো ছায়া! চিকিৎসকের অমানবিকতার বিচার চাইছে নেটপাড়া!
একজন জনপ্রিয় নায়ক থেকে রাজনীতির কর্মী— জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনপথ ছিল নানা অভিজ্ঞতা, সাফল্য আর ব্যর্থতার মিশেল। টলিউড তাঁকে মনে রাখবে একসময়ের সফল নায়ক হিসেবে, আর রাজনীতি তাঁকে মনে রাখবে লড়াকু প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। তাঁর প্রয়াণে বাংলা চলচ্চিত্র জগত হারালো এক সোনালি অধ্যায়, যা আর ফিরে পাওয়া যাবে না।