একসময় পর্দায় তাঁর উপস্থিতি মানেই ছিল আলাদা আকর্ষণ। কখনও নায়ক, কখনও খলনায়ক, আবার কখনও সঞ্চালক— বহুমুখী চরিত্রে দর্শককে মুগ্ধ করেছেন ‘কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়’ (Krishnokishore Mukherjee)। তাঁর কড়া দৃষ্টি, সংযত সংলাপ উচ্চারণ আর গম্ভীর অভিব্যক্তি তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে বরাবর। এমন অভিনেতাই এক সময় তুমুল আলোচনায় এসেছিলেন ব্যক্তিগত জীবনের কারণে। অভিনেত্রী কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Kamalika Banerjee) সঙ্গে তাঁর প্রেমকাহিনি নিয়ে যেমন বিনোদন জগতে কানাঘুষো চলেছিল, তেমনই প্রশ্ন উঠেছিল, সেই সম্পর্কই কি তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল?
এক সময়ে কাজের চেয়ে প্রেম নিয়েই তখন বেশি আলোচনায় ছিলেন দু’জনেই। নানান গুঞ্জনের মধ্যে হঠাৎ করেই কৃষ্ণকিশোর যেন আড়ালে চলে গেলেন। বড়পর্দা থেকে ছোটপর্দা, কোথাও তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবার তিনি ফিরেছেন অভিনয়ে। ধারাবাহিক দিয়ে শুরু হলেও এবার নতুন করে বড়পর্দায় ফিরতে চলেছেন। অনিলাভ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘বেলা’-য় তাঁকে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে অভিনয় করতে। সেখানে তিনি রেডিও কেন্দ্রের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
নিজে জানিয়েছেন, “ঐতিহাসিক পটভূমির উপর দাঁড়িয়ে তৈরি এই ছবিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে, আমার চরিত্রও তার মধ্যে অন্যতম।” দীর্ঘদিন পর এমন প্রত্যাবর্তন তাঁকে ঘিরে আবারও কৌতূহল বাড়িয়েছে। যদিও অভিনেতার আড়ালে থাকার সময়টাও একেবারে অকাজে যায়নি। একাধিক ধারাবাহিকে টানা কাজ করেছেন তিনি। ‘ইচ্ছেপুতুল’, ‘মিঠিঝোরা’ কিংবা ‘ডায়মন্ড দিদি জিন্দাবাদ’— সবক’টিতে তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছিল। তবে অভিনয়ের মাঝেই শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে। মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারের কারণে কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল।
সেই সময় এক ধারাবাহিকে তাঁর চরিত্রে অন্য অভিনেতাকে আনা হয়, যদিও তিনিও বেশিদিন টেকেননি। অবশেষে আবারও কৃষ্ণকিশোরই ফিরেছিলেন সেই চরিত্রে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকের গল্প বদলেছে, দর্শকের রুচিও পাল্টেছে। তাই আগের মতো সাড়া না পেলেও নিজের জায়গাটা আঁকড়ে রেখেছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ঘুরপাক খায়— যদি প্রেমে না জড়াতেন, যদি অন্যরকম সিদ্ধান্ত নিতেন, তবে কি আরও অনেক দূর এগোতে পারতেন? তিনি অবশ্য এসব নিয়ে কখনও আক্ষেপ করেন না।
আরও পড়ুনঃ লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে উঠে এল মানসিক চাপে ভেঙে পড়া প্রজন্মের যন্ত্রণা! ‘চিরসখা’-র প্লুটোর মৃ’ত্যু নিয়ে বিতর্ক, কেউ বলছেন অবাস্তব, আবার অনেকের মতে এটাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে সন্তানদের জোর করার করুণ পরিণতি! লেখিকা কি সত্যিই তুলে ধরছেন সমাজের নির্মম সত্য?
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, জীবনে যা যা করেছেন, তা নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট। কোনও কিছু থেকে দূরে সরে যেতে হলেও সেটা মেনে নিয়ে এগিয়ে চলাই তাঁর নিয়ম। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জন্য কাজের ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। বরং জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তিনি খোলা বইয়ের মতোই রেখেছেন, যেখানে লুকোনো কিছু নেই। তিনি মনে করেন, অভিনেতার পাশাপাশি মানুষ হিসেবেও নিজের সততাই তাঁর বড় পুঁজি। জীবনের ঢেউ কখনও তাঁকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, আবার কখনও থেমে গেছে। বাইরে থেকে অনেকেই ভেবেছেন সব শেষ, অথচ ভেতরে তিনি শান্ত ছিলেন।