এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘চিরসখা’-তে (Chiroshokha) প্লুটোর মৃ’ত্যু দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। সংসারের অশান্তি আর পারিবারিক চাপে ভেঙে পড়ে সে শেষমেশ নিজের জীবন শেষ করার পথ বেছে নেয়। মায়ের অবহেলা, মানসিক চাপ আর প্রিয়জনদের কাছ থেকে সঠিক সমর্থন না পাওয়াই তাকে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে বর্তমানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ যদিও মানতে পারছেন না, একাংশ দর্শকরা বলছেন, এ যেন সমাজেরই প্রতিচ্ছবি তুলে ধরলেন লেখিকা ‘লীনা গঙ্গোপাধ্যায়’ (Leena Ganguly)।
সমাজ মাধ্যমে সব সময় ওনার লেখনী নিয়ে আলোচনা থেকে সমালোচনা হয়েই থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্লুটোর মৃ’ত্যুকে ঘিরে সমাজ মাধ্যম উত্তাল এই মুহূর্তে। একাংশ যেমন বলছেন এতটা নির্মম পরিণতি কাম্য ছিল না। অন্য অংশের কোথায়, এখন অনেক ছেলে-মেয়ে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাপে পড়ে ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সমাজ মাধ্যমে একজন দর্শক আবেগ নিয়ে লিখেছেন, “আমরা অনেক সময় লীনা গাঙ্গুলির ধারাবাহিক নিয়ে সমালোচনা করি, ট্রোল করি। কিন্তু তাঁর লেখায় যেসব বাস্তবতা উঠে আসে, তা আসলে সমাজেরই প্রতিফলন।”
লেখিকার প্রসঙ্গে যদি বলতেই হয়, সেক্ষেত্রে তিনি শুধু কাল্পনিকতা দিয়ে গল্পের পটভূমি সাজান না, বরং জীবনের ভেতরকার কঠিন সত্যি গুলো তুলে ধরেন। যেমন কিছুদিন আগে সেই শেষ হওয়া ধারাবাহিক ‘মিঠিঝোরা’-তে, মুখ্য চরিত্র ‘রাইপূর্ণা’র ভুয়ো গর্ভাবস্থা দেখানো হলেও পরে জানা যায় সেটা আসলে ক্যা’ন্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। বাস্তবে অনেক দর্শকের জীবনেও এমন ঘটনা সত্যি ঘটেছে। একই ধারাবাহিকের শেষের পর্যায় ‘রাইপূর্ণা’র পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের অংশটাও নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, যেটা দর্শকদের চরিত্রের আরও কাছে নিয়ে গেছিল।
দিনের পর দিন মাতৃকালীন মানসিক অবসাদে ভুগলে একজন মানুষ কতটা ভেঙে পড়তে পারে, সেটা স্পষ্ট বোঝানো হয়েছে সেই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে । ‘রাইপূর্ণা’র চরিত্রে আরাত্রিকা মাইতির অভিনয় সত্যিটাকে আরও ফুঁটিয়ে তুলেছিল। সব মিলিয়ে এই গল্প দর্শকদের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে যে, ডিপ্রেশন বা মানসিক অসুস্থতাকে হালকা করে দেখা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। ‘চিরসখা’-তে প্লুটোর ঘটনাও তেমনই এক বাস্তবচিত্র। আজকে তো অনেক তরুণ-তরুণী পরিবারের অতি চাপের মুখে ভেঙে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই একজন দর্শক সমাজ মাধ্যমে বলেছেন, তাঁর পরিচিত একজনও ঠিক প্লুটোর মতো দু’বার আ’ত্মহ’ননের চেষ্টা করেছিলেন, কারণ তিনি নিজের পরিবারকে চাপ মানাতে পারেননি। সৌভাগ্যবশত সেই মানুষটি এখন বেঁচে আছেন, কিন্তু সবাই তেমনটা পারেন না। প্লুটোর ঘটনা দেখে তাই সেই দর্শকের মনে হয়েছে, যেন নিজের জীবনেরই প্রতিফলন পর্দায় দেখছেন তিনি। কেউ বলছেন, “অভিভাবক এবং পরিবার যদি সত্যিই সন্তানদের মঙ্গল চায়, তাহলে তাদের ইচ্ছা ও অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত!”
আরও পড়ুনঃ মৃ’ত্যুর কিছুক্ষণ আগেই অভিনেতা চিরঞ্জিতকে ফোন করেছিলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, শেষ সময়ে সহ-অভিনেতাকে কোন গোপন কথা বলেছিলেন তিনি? বর্ষীয়ান অভিনেতার প্রয়াণ, প্রকাশ্যে এল বড় খবর!
অন্যজন বলেছেন, “জোর করে বিয়ে দেওয়া, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া বা মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া কোনও সমাধান নয়। লেখিকা তাঁর লেখায় সেই বার্তাই দিয়েছেন যে, সমাজকে বদলাতে হলে আগে পরিবারকে বদলাতে হবে।” এক দর্শকের কড়া বার্তা, “মা-কাকিমারা যদি সত্যিই এই ধারাবাহিকগুলো মন দিয়ে দেখেন, তবে তাঁদের অন্তত একটি শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ আজকের দিনে দাঁড়িয়েও প্লুটোর মতো হাজার হাজার তরুণ-তরুণী মানসিক চাপে ভেঙে পড়ছে, আর তাদের জীবন আগেভাগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।” আপনাদের মতে লেখিকার লেখা কতটা বাস্তবসম্মত?