বাংলা টেলিভিশনে এমন অনেক ধারাবাহিক রয়েছে, যেগুলি দর্শকের মনে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। সম্প্রতি স্টার জলসার ‘চিরসখা’ (Chiroshokha) সেই তালিকায় একেবারে সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে। প্রথম দিন থেকেই গল্পের শক্ত ভিত্তি, চরিত্রের আবেগ আর বাস্তবতার ছোঁয়ায় এই ধারাবাহিক দর্শকদের কাছে যেন এক বাস্তবের আয়নার মতো হয়ে উঠেছিল। চরিত্রগুলির সমস্ত আবেগের সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের জীবনের মিল খুঁজে নিয়েছিলেন। সেই কারণেই গল্পের হঠাৎ এক মৃ’ত্যু সবাইকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে!
এই আঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে প্লুটোর আ’ত্মহ’ত্যার ঘটনা। নিতান্তই পর্দায় এই মৃ’ত্যু ঘটলেও, দর্শকের মনে তার প্রভাব যেন একেবারে বাস্তবের মতোই। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে লিখছেন, এই মৃ’ত্যু তারা মেনে নিতে পারছেন না। অনেকের আবার প্রশ্ন, কেনই বা হঠাৎ এমন করে শেষ করা হলো এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকে? বিশেষত মিঠি আর প্লুটোর অটুট প্রেমের পরিণতি না দিয়ে, ভেঙে দেওয়ায় আক্ষেপ আরও বেড়েছে। অনেকে আবার ধারণা করছেন, প্লুটোর মৃ’ত্যুর পেছনে তার মায়ের চাপই বড় কারণ।
এই প্রশ্নগুলোই এখন আলোচনার কেন্দ্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। দর্শকদের ক্ষোভ সামলাতে সম্প্রতি কলকাতার এক ক্যাফেতে আড্ডার আসর বসেছিল ‘চিরসখা’র কলাকুশলীরা। সেখানেও দর্শকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল—প্লুটোকে কেন মে’রে ফেলা হলো? চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতারা তাঁদের দিক তুলে ধরলেও দর্শকদের অস্বস্তি পুরোপুরি দূর হয়নি। তাঁদের মতে, এই মৃ’ত্যুর পর গল্পে টুইস্ট বাড়লেও আবেগের দিক থেকে ধারাবাহিক এক বড় শূন্যতার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ধারাবাহিকের লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গল্পটা পূর্বনির্ধারিতই ছিল। তাঁর মতে, শুধু আবেগ বা বিনোদন নয়, এর ভেতরে একটি সামাজিক বার্তাও রয়েছে। তিনি বলেন, এক নির্দিষ্ট বয়সের পর ছেলে-মেয়েদের উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বা চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। তাই এই মৃত্যুর প্লট দিয়ে দর্শকদের মনে চিন্তার খোরাক যোগ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। যদিও দর্শকদের প্রশ্ন রয়েই গেছে, কাহিনি কি অন্য পথে এগোতে পারত না?
আরও পড়ুনঃ “ও নিজের জীবনটাকে সম্পূর্ণ অগোছালো করে রেখেছিল, যা একেবারেই ভুল পথের দিকে নিয়ে গেছে, প্রচুর ম’দ খেত, নে’শায় ডুবে থাকত, নিজের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখত না” – প্রয়াত অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মুখ খুললেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়!
তবে সবচেয়ে বড় কৌতূহল এখন যে— প্লুটো কি সত্যিই চিরতরে হারিয়ে গেল, নাকি দর্শকের চাপের মুখে লেখিকা আবারও তাঁকে ফিরতে পারে গল্পে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। লীনা গাঙ্গুলি এই বিষয়ে মুখ খোলেননি, বরং এড়িয়েই গেছেন। কিন্তু দর্শকদের আবেগ, ক্ষোভ আর প্রত্যাশা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ‘চিরসখা’র ভবিষ্যৎ পর্বগুলো ঘিরে বিতর্ক এবং আলোচনার ঝড় থামার নয়। বাস্তব আর কল্পনার সীমা যে দর্শকদের মনে এভাবে মিশে যেতে পারে, তারই এক প্রমাণ এই ধারাবাহিক।