“বাংলায় এত অবাঙালিয়ানার রমরমা কেন হবে?” “বাংলার সংস্কৃতির ক্ষতি করে অবাঙালিদের ট্রেন্ডিং এক্সপেরিমেন্টই আমার আপত্তি!”— মহালয়ার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়!

বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেতা ‘ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়’ (Bhaswar Chatterjee) মাঝেমধ্যেই নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মতামত ও নানান ভাবনা সমাজ মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। কখনও সেসব লেখা রসিকতার, আবার কখনও প্রতিবাদের সুর মিশে থাকে। সম্প্রতি তাঁর একটি পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে আলোচনা। পোস্টটি প্রথমে হালকা মজার মনে হলেও, ভেতরে ছিল এক গভীর বার্তা—বাংলা সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে তৈরি হওয়া কিছু অদ্ভুত নির্দেশনা, সেগুলির বিরুদ্ধে অভিনেতার প্রতিবাদ।

ঘটনাটি ঘটে এক অবাঙালি পরিচালকের নির্দেশনায় মহালয়া সম্পর্কিত শুটিং করতে গিয়ে। ভাস্বর জানান, ওই পরিচালক প্রথমে চেয়েছিলেন ভোরবেলা মহালয়া শোনার সময় চরিত্ররা চা-ঝালমুড়ি খাবে। আপত্তি জানালে প্রস্তাব আসে চা-সিঙ্গাড়া খাওয়ার। অভিনেতারা তখন স্পষ্ট বলেন, এ সময় অধিকাংশ মানুষ তো বিছানায় শুয়েই অনুষ্ঠান শোনেন, কেউ কেউ চা খেলেও তা ব্যতিক্রমী নয়। কিন্তু পরিচালকের দাবি ছিল—“জমছে না।” এরপর তিনি আরও অদ্ভুত প্রস্তাব দেন।

মহালয়ার গানে পরিবারের সবাইকে নাচতে হবে! এই ধারণা শুনে অভিনেতারা অবাক ও ক্ষুব্ধ হয়ে সরাসরি জানিয়ে দেন, এমন দৃশ্য দর্শকের কাছে অসম্মানজনক এবং অগ্রহণযোগ্য হবে। শেষপর্যন্ত পরিচালককে মত পাল্টাতে হয়। ভাস্বরের এই অভিজ্ঞতার কথা সামনে আসতেই নেটপাড়ার বড় অংশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই ওই পরিচালককে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে, তাঁকে ‘অপদার্থ’ বলতেও পিছপা হননি। আবার অন্যদিকে, ভাস্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বহু মানুষ।

কারণ তাঁর মতো শিল্পীরা প্রতিবাদ করায় বাংলা সংস্কৃতিকে বিকৃত হতে হয়নি। কেউ কেউ আরও মন্তব্য করেছেন, যদি এমন শুটিংয়ে অঙ্গীকারহীন কিছু শিল্পী থাকতেন, তাঁরা হয়তো অর্থের প্রলোভনে আপত্তি না জানিয়ে নেচেই ফেলতেন। সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভাস্বর পরিষ্কার করে বলেন, কোনও অবাঙালি পরিচালক বাংলা পুজো বা সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতেই পারেন, তবে তার আগে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা ও চর্চা করা জরুরি।

তাঁর কথায়, “সেদিন আমরা সবাই মিলে প্রতিবাদ করেছিলাম বলেই এমন অসংলগ্ন শুটিং থেকে বাঁচা গেছে। ভাবলে অবাক লাগে, যদি কাস্টে কেবল অবাঙালি শিল্পীরা থাকতেন, তাহলে হয়তো এরকম নির্দেশ মানতেই হতো।” তাঁর মতে, এটাই বড় বিপদ— সংস্কৃতির মূল সত্তা না জেনে শুধুমাত্র দর্শকের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার জন্য অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্ট চালানো। এই ঘটনার সূত্র ধরে ভাস্বর আরও বড় প্রশ্ন তুলেছেন! ভাস্বর বলেন, বাংলা বিনোদন জগতে এত “অবাঙালিয়ানা” প্রবণতা কেন বাড়ছে?

আরও পড়ুনঃ অনেকদিন ধরেই ধৈর্যের সীমা ছাড়াচ্ছিল গল্প, এবার ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ থেকে দিব্যজ্যোতির প্রস্থানে বাড়ল দর্শকের ক্ষোভ! “দিব্যজ্যোতি ছাড়লে স্বস্তিকাকেও রাখতে হবেনা”, “সূর্য না থাকলে দীপাকেও চাই না!”— দর্শকের স্পষ্ট দাবি!

তাঁর দাবি, এই বাতিকই সংস্কৃতিকে আঘাত করছে। যেমন সম্প্রতি এক রিয়্যালিটি শো-এ চণ্ডালিকা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক, সেখানেও বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির গভীরতা অবহেলিত হয়েছিল। অভিনেতার মতে, “ট্রেন্ডিং হওয়ার লোভে বা নতুনত্ব আনার নামে যখনই আমাদের শিকড়কে উপেক্ষা করা হয়, তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐতিহ্য।” তাই তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, জনপ্রিয়তার খাতিরে নয়, সংস্কৃতির মর্যাদা রক্ষার জন্যই শিল্পীদের দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করা উচিত।