টলিউডের ব্যতিক্রমী অভিনেত্রী হিসাবে ‘ইশা সাহা’ (Ishaa Saha) যথেষ্ট পরিচিত একটি নাম। বাণিজ্যিক ছবির বাইরে গিয়ে তিনি বিভিন্ন ধারার ছবিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন সবসময়। ওয়েব সিরিজ ‘ইন্দু’র জন্য তিনি এখন প্রায় সবার পরিচিত একটি নাম। বড়পর্দাতেও তাঁর অভিনয়ের যথেষ্ট প্রশংসা হয়। সম্প্রতি ছিল মহানায়কের (Uttam Kumar) জন্মদিন। এদিন একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রীর মন্তব্য নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজ মাধ্যমে। কী এমন বললেন অভিনেত্রী, বাঙালির প্রিয় মহানায়ককে নিয়ে?
বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তমকুমারের নাম উচ্চারণ হলেই যেন এক অদ্ভুত আবেশ তৈরি হয় আপামর বাঙালির মনে। অভিনেত্রী ইশা সাহার চোখে সেই আবেশের গুরুত্ব একটু আলাদা। ছোটবেলায় টেলিভিশনের সামনে মাদুর পেতে বসে বাবার আনা সিনেমার কাসেট দেখতে দেখতেই তাঁর প্রথম পরিচয় মহানায়কের সঙ্গে। তখনও সিনেমা কিংবা অভিনয়ের গভীরতা বোঝার বয়স হয়নি, কিন্তু পর্দায় উত্তমকুমারের উপস্থিতি তাঁর মনে জায়গা করে নেয়। মা–বাবার উৎসাহ, বিশেষ করে মায়ের মুখে শোনা প্রশংসাই যেন ইশার কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আসতে আসতে অভিনেত্রীর বয়স যতই বেড়েছে তিনি বুঝতে শিখেছেন, পর্দায় এতটা সহজ-সরল অথচ এতটা অসাধারণ হয়ে ওঠা খুব সহজ কাজ নয়। ইশার মতে, মহানায়কের ভেতরে ছিল এক অন্যরকম মায়া। যেটা শুধু গল্প বা সংলাপ দিয়ে নয়, তাঁর ব্যক্তিত্ব দিয়েই দর্শকের মনে গেঁথে যেত। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তাঁর রসায়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে পর্দার মুহূর্ত— সবকিছুতেই এক অদ্ভুত আবেদন ছিল, যা আজও মনে দাগ কেটে যায়।
অভিনয়ে আসার পর ইশা আরও গভীরভাবে টের পেয়েছেন, উত্তমকুমার কেন সত্যিই ‘মহানায়ক’। তাঁর মতে, অন্য সব অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেও স্বীকার করতে হয়, উত্তমকুমারের জায়গা আজও কেউ পূরণ করতে পারেননি। দর্শকের সঙ্গে যে সম্পর্ক তিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেটাই তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে। সময় পালটেছে, রুচি পালটেছে, কিন্তু তাঁর উপস্থিতি যেন কালজয়ী। ইশার বিশ্বাস, শুধুমাত্র গল্প শুনেই বোঝা যায়, তাঁর তুলনা আর কারও সঙ্গে চলে না।
ইশার কথায়, কলেজ জীবনে প্রেমের দিনগুলিতে কখনও কখনও মনে হত, যদি উত্তমকুমারের নায়িকা হওয়া যেত! যদিও অভিনয়ে আসার আগে সে সাহস তাঁর ছিল না। পরবর্তীকালে যখন তিনি টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেন, তখন ইশার মনে হয়েছে,”যদি মহানায়ক বেঁচে থাকতেন, হয়তো সত্যিই এমন সুযোগ আসতে পারত। তাঁর চোখেমুখের রোমান্টিক আভা এতটাই অনন্য ছিল যে, একবারের জন্য হলেও সেই কল্পনা আনার মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।” আজকে অনেকেই হয়তো অভিনয়ের ধারা বদলের সঙ্গে নিজেকে বদলেছেন।
আরও পড়ুনঃ “আমাকে ব্যথা দিলাম, ব্যথাটা বোঝাতে!” “নিজে যন্ত্রণাটা অনুভব করতে পারলে, তবেই সেটা পর্দায় সত্যি হয়ে উঠবে!”— সেদিনের দৃশ্যে গীতা দের অভিনয় এবং অমূল্য শিক্ষা আজও ভুলতে পারেন না পরিচালক অতনু ঘোষ! জানেন অভিনেত্রী কি করেছিলেন সেদিন?
কিন্তু ইশার মতে উত্তমকুমারের ‘অরা’ কখনও কমবে না। ইশার স্বপ্ন, যদি কখনও ‘সপ্তপদী’-র মতো ছবির আধুনিক সংস্করণ তৈরি হয়, তবে সুচিত্রা সেনের রিনা ব্রাউনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ যেন তিনি পান। এমনকি মজার ছলে স্বীকার করেছেন ইশা, “যদি উত্তমকুমারের সঙ্গে পর্দায় চুমুর মতো একটি রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করতে হত, দ্বিধা বোধ করতাম না। কিন্তু চুম্বনের ঠিক আগেই হয়তো নিজেই লজ্জায় ধপাস করে পড়ে যেতাম।” সবকিছু মিলিয়ে, ইশার কাছে উত্তমকুমার মানে কেবলই একজন অভিনেতা নন, বরং বাংলা সিনেমার এক অবিস্মরণীয় রোমান্টিক হিরো।