“আমাকে ব্যথা দিলাম, ব্যথাটা বোঝাতে!” “নিজে যন্ত্রণাটা অনুভব করতে পারলে, তবেই সেটা পর্দায় সত্যি হয়ে উঠবে!”— সেদিনের দৃশ্যে গীতা দের অভিনয় এবং অমূল্য শিক্ষা আজও ভুলতে পারেন না পরিচালক অতনু ঘোষ! জানেন অভিনেত্রী কি করেছিলেন সেদিন?

বাংলা বিনোদন জগতের বর্ষীয়ান তথা অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী ছিলেন ‘গীতা দে’ (Geeta Dey), প্রয়াত হয়েছেন ২০১১ সালের ১৭ই জানুয়ারি। গতকাল ছিল শিক্ষক দিবস। এই প্রসঙ্গেই তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে পরিচালক ‘অতনু ঘোষ’ (Atanu Ghosh) ভাগ করলেন, তাঁর কিছু অমূল্য অভিজ্ঞতা। তাঁর কাছে গীতাদি শুধু একজন অভিনেত্রী নন, ছিলেন এক জীবন্ত পাঠশালা। অভিনয়ের খুঁটিনাটি শেখাতে গিয়ে যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গিয়েছেন, তা আজও পরিচালক ভুলতে পারেননি।

অতনু মনে করেন, গীতাদির চরিত্রে ঢোকার পদ্ধতিটাই ছিল আলাদা। তিনি কখনওই শুধু সংলাপ আওড়ে যেতেন না। বরং ভেতর থেকে চরিত্রকে অনুভব করে তারপর সেটা ফুটিয়ে তুলতেন। যেমন একবার তাঁকে এমন এক চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছিল, যেখানে হাঁটতে গিয়ে পা টেনে চলতে হবে। শুটিং শুরুর আগে পরিচালক চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কি দিদি সত্যিই হাঁটার ধরনটা মনে রেখেছেন তো?

হাসিমুখেই গীতা দেবী উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ, আমার ব্যথা আছে। মনে আছে আমার।” তবে ক্যামেরা চলতেই সবাই আসল চমকটা পেয়েছিলেন সেদিন। হঠাৎই মনে হচ্ছিল সত্যিই অভিনেত্রী ভীষণ যন্ত্রণায় ভুগছেন। প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি মুখভঙ্গি ছিল নিখুঁত ব্যথার প্রকাশ। শট শেষ হওয়ার পর পরিচালক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এত বাস্তব অভিনয় সম্ভব হল কীভাবে? গীতা দেবীর সহজ উত্তর, “আমি নিজেকে বোঝালাম যে পায়ে খুব ব্যথা করছে।

যন্ত্রণাটা অনুভব করতে পারলে তবেই তো তা পর্দায় সত্যি হয়ে উঠবে!” এই সরল অথচ গভীর ব্যাখ্যাই যেন অতনুর কাছে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হয়ে থেকে গেছে আজও। তিনি সেদিন উপলব্ধি করেন, অভিনয় কেবল অনুকরণ নয় বরং অনুভবের শিল্প। পরিচালকের কথায়, “গীতাদি সবসময় বলতেন, শুধু ভান করলে দৃশ্য প্রাণহীন হয়ে যায়। দর্শককে সত্যি অনুভব করাতে হলে অভিনেতার ভেতরেই সেই আবেগ জাগাতে হবে।”

আরও পড়ুনঃ “আমাকে এবং আমার মাকে দিনের পর দিন যেভাবে রে*প করা হয়েছে!”— অবশেষে ডিভোর্স প্রসঙ্গে সব জল্পনার ইতি টেনে মুখ খুললেন সুস্মিতা রায়! কেন হয়েছিল তাঁর বিচ্ছেদ, কী জানালেন তিনি?

পরিচালকের কাছে এই অভিজ্ঞতাগুলো যেন সেরা শিক্ষার পাঠ হিসেবে কাজ করেছে। যা কিনা আজও তাঁকে এনে দিচ্ছে পরিচিতি আর সাফল্য। এত বছর পরেও তিনি মনে করেন, প্রতিটি শটে গীতা দেবী যেন নতুন করে শিখিয়ে গেছেন অভিনয়ের মানে কী। তাই শিক্ষক দিবসে অন্যদের সঙ্গে তিনিও তাঁর এই শিক্ষিকার পাঠ এবং তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন তিনি।