“আমার মতো আন্তর্জাতিক শিল্পী বাংলায় অবহেলিত!” “ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ইয়েস ম্যান’ না হলে কাজ মেলে না, এখানে লবিই সব”—অতুলপ্রসাদ-দ্বিজেন্দ্রগীতি গেয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি, তবুও বাংলার মঞ্চে ব্রাত্য ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়! এবার ওভাররেটেড শিল্পীদের দাপট নিয়েও মুখ খুললেন তিনি!

বাংলার সঙ্গীতে ‘ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর (Riddhi Bandhopadhyay) নাম আলাদা করে চেনাতে হবে না কাউকে। ছোটবেলা কোন্নগরে বেড়ে ওঠা, মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই গানের তালিম শুরু ঋদ্ধির। কলকাতায় এসে মায়ের হাত ধরে গুরুদের কাছে নতুন জীবন পেয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর সঙ্গীতের মূল আকর্ষণ রবীন্দ্র-নজরুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের প্রতি তাঁর ঝোঁক আলাদা জায়গা করে দিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলার এই কম শোনা গানগুলোকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি।

গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যে সহজ নয়, তা খোলাখুলি স্বীকার করেছেন ঋদ্ধি। দীর্ঘদিন ধরে ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করলেও গানের জন্য চাকরি ছেড়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, এই পথটা অনেকটা স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মতো ছিল। তাঁর তৈরি করা ‘পঞ্চকবি’ ধারণা দিয়ে তিনি কম আলোচনায় থাকা কবিদের গানকেও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু স্পষ্টবাদিতা এবং কারও কাছে হাত না পাতার জন্য আজও অনেক জায়গা থেকে তিনি উপেক্ষিত।

সুযোগ পাওয়ার অভাব নিয়েও খোলামেলা মন্তব্য করেছেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বা বড় উৎসবের মঞ্চে তাঁকে ডাকা হয় না বলেই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। দ্বিজেন্দ্রলাল বা অতুলপ্রসাদের গানের অনুষ্ঠান হলেও সেখানে তিনি সুযোগ পান না। যদিও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি নিজের জায়গা পাকা করেছেন। এই নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও তিনি মানিয়ে নিয়েছেন বাস্তবকে। তাঁর মতে, যেটুকু পেয়েছেন তিনি, সেটাই অনেক গুণী শিল্পীর ভাগ্যে জোটে না।

বাংলা সিনেমা এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, কাজের জায়গায় লবি বা গোষ্ঠীর প্রভাব বড় ভূমিকা পালন করে। তাই ডাক পেলেও বড় সুযোগ মেলে না। টেলিভিশনে অনেক গান নিয়ে রিয়্যালিটি শো হলেও, একটাতেও তাঁকে দেখা যায়নি। এর পিছনে তাঁর ব্যাখ্যা, যতটা আগ্রহ দেখানো বা যোগাযোগের প্রয়োজন, তিনি সেটা করেন না। উপরন্তু, বহু শিল্পীকে তিনি ‘ওভাররেটেড’ বলে মনে করেন, যদিও নাম নিতে চাননি।

আরও পড়ুনঃ ছোটপর্দায় ঝড় তোলা খলনায়িকা শর্বরী মুখার্জি, ‘কৃষ্ণকলি’র পর হঠাৎ করেই গায়েব! অবশেষে ফিরছেন নতুন ধারাবাহিকে! কেন‌ এতদিন টেলিভিশন থেকে দূরে ছিলেন তিনি?

বর্তমান সময়ে সমাজ মাধ্যমের প্রভাব নিয়েও অকপট মত ঋদ্ধির। তাঁর মতে, এখন রিল বানানো আর দ্রুত লয়ের গান গাওয়া বা নেটপ্রভাবীদের মতো উপস্থিতি না থাকলে সহজে কাজ মেলে না। মহামারির পর থেকে এই চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে। যদিও অনেক রিল তাঁর ভালও লাগে, তবে সমাজ মাধ্যমের অশালীনতা তাঁকে চিন্তায় ফেলে। কলকাতার অসহিষ্ণু পরিবেশ, প্রতিনিয়ত বাজে মন্তব্য—এসবের মধ্যে একজন সংবেদনশীল শিল্পীর টিকে থাকা সত্যিই কঠিন। তবু ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পথেই অটল, আর সেটাই তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।