আজ বাদে কাল বোধন (Durga Puja), ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। উমাও তাই চার সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি হাজির। চার সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কন্যা লক্ষ্মী আজও এমন একটা ছাঁচ, যার মধ্যে সব নারীকেই ফেলে গড়ে নেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েই গেছে। টলিউডের ব্যতিক্রমী অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রর (Sreelekha Mitra) কাছে দেবী লক্ষ্মী মানে শুধুই ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি। তিনি মনে করেন, সমাজের চোখে যিনি ‘অলক্ষ্মী’, তাঁর নিজের বিশ্বাসে তিনি বরাবরই লক্ষ্মী মেয়ে।
ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠাপড়া, কাজের অনিশ্চয়তা কিংবা সংসারের লড়াই— সব কিছুর মধ্যেও নিজেকে ধরে রাখার শক্তি এসেছে তাঁর ভিতরের সেই ‘লক্ষ্মী’কে আঁকড়ে থাকার মধ্য দিয়েই। শ্রীলেখার মতে, যেভাবে মানুষ ভাবে যে লক্ষ্মী শুধু নীরব আর শান্ত মূর্তি, বাস্তবে প্রয়োজন হলে তিনি প্রতিবাদীও হতে পারেন। শ্রীলেখা খোলাখুলিই বলেছেন, “আমার মা-ই ছিলেন আমার চোখে সত্যিকারের লক্ষ্মী। ঢেউ খেলানো চুল, মিষ্টি হাসি আর শান্ত স্বভাব— একেবারে লক্ষ্মীমন্ত বলতে যা বোঝায়।”
ছোটবেলায় মা তাঁকে দুব্বো হাতে ধরিয়ে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়তে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মগুলো সবটা তিনি মানতে পারেননি! বইয়ে লেখা ছিল স্বামীর আগে খাওয়া যাবে না, জোরে কথা বলা বারণ, উচ্চ হাসিও নাকি নিষিদ্ধ। তখনই প্রশ্ন জেগেছিল তাঁর মনে, খিদে পেলে কেউ অপেক্ষা করবে কেন? তাই নিয়ম ভেঙে ফেললেও, মাকে খুশি রাখতে তিনি দেবীর কাছে ছোট্ট করে ‘সরি’ বলতেন। ছোটবেলা থেকেই এই প্রশ্ন করা আর নিয়ম ভাঙার সাহস তাঁকে গড়ে তুলেছে আজকের মানুষ হিসাবে।
অভিনেত্রীর কথায়, তিনি আজও জীবনযুদ্ধে টিকে আছেন, শুধু মায়ের শেখানো সংযমের কারণে। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার আর কাজ দেয় না। তাও আমি সংসার চালাচ্ছি। কারণ, আমি যখন অনেক রোজগার করেছিলাম, টাকা উড়িয়ে দিইনি, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কিছুটা সঞ্চয়ও করেছি।” শ্রীলেখা জানান, বিদেশি ব্র্যান্ডের ব্যাগ বা প্রসাধনীতে টাকা খরচ না করে সংসারকে গুছিয়ে রাখার দিকেই বেশি মনোযোগী তিনি। মেয়েকে মানুষ করা, পোষ্যদের দেখাশোনা করা কিংবা নিজের বাড়ি টিকিয়ে রাখাই তাঁর কাছে ‘লক্ষ্মীমন্ত’ শব্দের বাস্তব প্রতিফলন।
তবে একদিকে যেমন তিনি সংসারের লক্ষ্মী, অন্যদিকে প্রতিবাদের মঞ্চে তাঁর কণ্ঠস্বরও ততটাই জোরালো। বারবার তাঁর এই প্রতিবাদী মনোভাব এবং নির্ভীক পদক্ষেপের জন্য– তাঁকে ‘অসভ্য’ বলা হয়েছে, কখনও বা তাঁকে বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি পিছু হটেননি। তাঁর কথায়, “লক্ষ্মীমন্ত মানে শুধু চুপ করে মেনে নেওয়া নয়, পাল্টা জবাব দেওয়াও।” তাই অন্যায় হলে তিনি চঞ্চলা বা চণ্ডী হতে পিছপা হন না। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই মনে করেন, শ্রীলেখা মানেই অস্বস্তি।
আরও পড়ুনঃ উৎসবের মরশুমেই স্টার জলসায় বড় রদবদল! শারদীয়াতে ইতি টানতে চলেছে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বেঙ্গল টপার ধারাবাহিক! হঠাৎ কোনও ঘোষণা ছাড়া চ্যানেলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ দর্শক!
কিন্তু তাঁর কাছে সেটাই শক্তি, যা তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করায় বারবার। এখন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের সহনশীলতা অনেকটাই কমেছে বলেই মনে করেন শ্রীলেখা। যদিও সমাজের অবক্ষয় তাঁকে রোজ ভাবিয়ে তোলে। তাঁর মতে, চারপাশ অনেক অসুরে ভরে গেছে, তাই আজকের দিনে শুধু লক্ষ্মী নয়, দরকার দুর্গার শক্তি। শ্রীলেখার এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে। তাই তিনি যেমন সংসারের দায়িত্বশীল লক্ষ্মী, তেমনই অন্যায়ের প্রতিবাদে দৃঢ় দুর্গাও।