তিনি একজন এমন অভিনেত্রী যাঁর জীবনযাপন থেকে চিন্তাভাবনায় থাকে বরাবরই স্পষ্ট স্বাধীনতার ছাপ। বিনোদন জগতে নানা ধরণের সাহসী পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়, কিন্তু ‘অপরাজিতা আঢ্য’ (Aparajita Adhya) যেন এসবের বাইরেই নিজের ছন্দে চলেন। কখনও শিবরাত্রির পোশাক নিয়ে, কখনও জন্মদিনে পুজো নেওয়ার কারণে, কখনও বা ছুটি কাটানোর মুহূর্ত— নেটমাধ্যমে নানা কটাক্ষের শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এসব সমালোচনায় তিনি আদৌ বিচলিত নন। নিজের মতো করেই বাঁচতে ভালোবাসেন, সেটা তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে স্পষ্ট।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও কম ব্যতিক্রমী নয়। খুব কম বয়সে অতনু হাজরার সঙ্গে প্রেমে পড়া, সমাজের চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করে সংসার পাতার সিদ্ধান্ত নেওয়া— সবটাই অপরাজিতার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রমাণ। অতনু পেশায় ছিলেন সাউন্ড টেকনিশিয়ান এবং বয়সেও অপরাজিতার চেয়ে বড়, তাই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছিল, অনেকে সাবধানও করেছিলেন। তবুও অপরাজিতা কারও কথা শোনেননি, কারণ তাঁর কাছে টান ছিল অতনুর ছোট একতলা বাড়ি আর মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতি। এক মাসের মধ্যেই তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়, আর আজও তাঁরা সেই বাড়িতেই একসঙ্গে থাকেন।
উল্লেখ্য, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ছোট পর্দা ও বড় পর্দায় নিজের অভিনয় দক্ষতায় দর্শকদের মন জয় করেছেন অপরাজিতা। কিন্তু শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, তিনি বারবার খবরে এসেছেন সমাজের প্রচলিত ধারণার বাইরে চলার জন্যও। কারও কটাক্ষ ঘাবড়ে না গিয়ে বরং নিজের বিশ্বাসে অটুট থেকে, যেভাবে তিনি এগিয়ে চলেছেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। অপরাজিতা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ‘বাড়ির মানুষ’ বলেই মনে করেন। সাংসারিক হওয়ার পাশাপাশি অভিনেত্রী প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিকও। হেন ঠাকুর নেই, যিনি পুজো পাননা তাঁর বাড়ি।
নিজের ভালোলাগা-খারাপলাগা সবকিছু ঈশ্বরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভালোবাসেন তিনি। অভিনেত্রীর বাড়িতে সব রকম পুজো-আচ্ছাই মহা সমারোহে হয়ে থাকে। তবে, প্রতিবছর নিজের বাড়ির প্রতিষ্ঠিত মা লক্ষ্মীকে তিনি নিজের হাতে নতুন রূপ দান করেন। পুজো করেন সন্তান স্নেহে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুজোর আগের দিন সারারাত জেগে ধনদেবীর অঙ্গরাগ করেছেন অভিনেত্রী, পুজোর দিন ছাড়া বাড়িতে দিয়েছেন আলপনা। একেই তো বলে লক্ষীমন্ত! কিন্তু এই শব্দটা নিয়ে অভিনেত্রীর রয়েছে প্রচুর ক্ষোভ! কিন্তু কেন?
আরও পড়ুনঃ ‘হয় নিজের মোটা চেহারা কমান, নয় রুচিশীল পোশাক পরুন!’ রুচিশীল পোশাক পরার পরামর্শ পেতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন রূপঙ্কর-পত্নী চৈতালি! দিলেন মোক্ষম জবাব
তাঁর কথায়, “আমি ওই লক্ষীমন্ত কথাটায় বিশ্বাসী নই। কারণ, আমি নিজের জীবন দিয়ে দেখেছি যে লক্ষী কাঁদের বলা হয়। যাঁরা কোনও কিছুর প্রতিবাদ করতে পারে না, নিজেদের সীমার ঊর্ধ্বে গিয়ে সবকিছু সহ্য করতে পারে, সমাজের চোখে তাঁরাই লক্ষী! আমি বিশ্বাসই করি না, এই কারণে শব্দটার উৎপত্তি! আমার মনে হয় যে, প্রতিবাদ হচ্ছে মানুষের অঙ্গ। মানুষকে ঈশ্বর প্রতিবাদ করার জন্যই ভাষা দিয়েছে। সুতরাং যে প্রতিবাদ করতে পারে না, তাঁর লক্ষীমন্ত আখ্যা নেওয়ার কোনও মানে হয় না। মেয়েরা মুখ খুলতে শিখুক। আজকের পৃথিবীতে বাঁচতে গেলে চন্ডী হওয়ার খুব দরকার আছে, আর সেটাই হতে হবে!”